Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের রেকর্ড


৮ জুলাই ২০২০ ১৩:১১

ঢাকা: রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারায় বাজেটের ঘাটতি মোকাবিলায় বিদায়ী অর্থবছরে সরকারের রেকর্ড পরিমাণ ব্যাংকঋণ নিতে হয়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এটি গত অর্থবছরে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা বেশি। সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। আর মূল বাজেটে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের জুনমাসের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারের এক দিকে রাজস্ব আয় কমে গেছে। বিপরীতে সরকারের ব্যয় বেড়ে গেছে। সরকারের নিয়মিত ব্যয়ের পাশাপাশি ত্রাণসহ বিভিন্ন প্রণোদনা খাতে সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতার নেমে এসেছে। ফলে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানি পণ্যে শুল্ক ছাড় দিতে হয়েছে। এসব কারণে সরকারের ব্যাংক ঋণ-নির্ভরতা বেড়েছে।‘

সূত্র জানায়, বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মোকাবিলায় বৈদেশিক উৎস থেকে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা এবং ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।

এছাড়া ২৭ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এবং অনান্য উৎস থেকে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু গত মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দেওয়া এবং অভ্যান্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ কমে যায। এতে করে বাজেটের ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার ব্যাংক ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ে এবং ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ঘাটতি বাজেট মোকাবিলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষামাত্রা থাকলেও সরকার ঋণ নিয়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ গত জুন মাসে ঋণ নিয়েছে ২০ হাজার ৭০৪ কাটি টাকা, মে মাসে ৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। এদিকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের মধ্যে প্রায় ৭৯ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। অবশিষ্ট ৬ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে।

বিজ্ঞাপন

রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতি: বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ৮৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ৮ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। সে হিসেব এবার রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এরপর সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের তিন খাতের মধ্যে ভ্যাট থেকে ৮১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, আয়কর থেকে ৭৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং কাস্টম থেকে ৬০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভ্যাট থেকে ৮৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, আয়কর থেকে ৭২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং শুল্ক আদায় হয়েছিল ৬৩ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। এনবিআরর সূত্র জানিয়েছে এটি সাময়িক হিসাব। আগামী দুএক দিনের মধ্যে রাজস্ব আদায়ের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে।

ঘাটতি ব্যাংক ঋণ রেকর্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর