‘যুগে যুগে সংকটে তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে’
৮ জুলাই ২০২০ ১৯:১০
ঢাকা: করোনাভাইরাস সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ তরুণেরা এগিয়ে এসেছে সংকটে পর্যুদস্ত মানুষের সেবায়। হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যার যার অবস্থান থেকে। সরকারের তরুণ সাংসদ, দলের তরুণ নেতা, এই সংকট থেকে উত্তরণের সংগ্রামে কেউ পিছিয়ে নেই।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় করোনাকালীন সংকট নিয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’-এর দশম পর্বে যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। এবারের পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘করোনা সংকট মোকাবিলায় তরুণদের ভূমিকা’। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তরুণদের সামগ্রিক প্রচেষ্টা নিয়ে এই পর্বে আলোচনা করা হয়।
বরাবরের মতোই বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিকের এই পর্বটিও সরাসরি প্রচারিত হয় আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। একইসঙ্গে দেখা যায় বিজয় টিভির পর্দায় এবং সারাবাংলা ডটনেট, বিডিনিউজ, সমকাল, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, বাংলা নিউজ, যুগান্তর, জাগো নিউজ ২৪ ও বার্তা ২৪-এর ফেসবুক পেজে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় এবারের পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত হন বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, চট্টগ্রামের নারী সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ, মিশন সেভ বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান কাদির এবং চ্যানেল ২৪-এর রিপোর্টার সাংবাদিক জিনিয়া কবির সূচনা।
আলোচনায় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, যুগে যুগে সংকটকালে সবসময় তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান করোনা সংকটেও অসহায়-দুঃস্থ মানুষের পাশে সবার আগে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের তরুণ সমাজ। আমার নির্বাচনি এলাকায় ‘ডাক্তার যাবে বাড়ি’ স্লোগানকে সামনে রেখে যখনই কেউ অসুস্থ হয়েছে, খবর পেলেই ডাক্তার তার বাড়িতে ছুটে যেতেন, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতেন। আমার এলাকা নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকা, নদী ভাঙনের শিকার সেসব মানুষের পাশে আমি সবসময় দাঁড়িয়েছি। আমার এলাকায় অসহায়, দুঃস্থ মানুষকে করোনাকালীন সংকটে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। হাওর অঞ্চলসহ দেশের বন্যাকবলিত সব এলাকায় কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে পেরেছি। এসময় তিনি ১৯৯৮ সালে বন্যায় তরুণদের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন।
সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্নের আগ থেকে তরুণরাই সব সংগ্রাম-আন্দোলন ও সংকটে বড় ভূমিকা রেখেছে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তরুণরাই সবার আগে এগিয়ে এসেছে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার এলাকা ফটিকছড়িতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর থেকেই তরুণদের সঙ্গে সমন্বয় করে ডোর-টু-ডোর গিয়ে জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি। আমাদের পূর্ণাঙ্গ চারটি আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছি। আমাদের ২০ শয্যার যে হাসপাতাল রয়েছে, সেটিকে পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করার কাজ চলছে। শুরুতে জনসচেতনতা তৈরি করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছি, মাস্ক দিয়েছি। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে তরুণদের মাধ্যমে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছি। এসময় তিনি তরুণদের বাংলাদেশের শক্তি ও ভবিষ্যৎ বলে উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তারুণ্যের সংস্কৃতিকে ধারণ করে। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সব কমিটিতে তারুণ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। করোনা সংকটকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে অসহায়-দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দুর্যোগ-মহামারি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা ছিল বলেই দুর্যোগ শুরুর পর থেকে দল ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিলে এ পর্যন্ত ১ কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়েছেন। সংকটে দলীয় সভাপতির দেওয়া ৩১টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এবং তার নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
চ্যানেল ২৪-এর স্টাফ রিপোর্টার জিনিয়া কবির সূচনা বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের কাজ সঠিক তথ্য তুলে ধরা। আমাদের চ্যলেঞ্জ ছিল সঠিক তথ্য তুলে আনা। করোনা মোকাবিলার ত্রুটি কিংবা হাসপাতালের সমন্বয়হীনতা তুলে ধরার পর স্বাস্থ্যসেবায় আরও সুদুরপ্রসারী ভালো ফল লক্ষ করা যায়। গণমাধ্যমকর্মীরা জীবনবাজি রেখে কাক করছেন এই মহামারিতে। চিকিৎসা নিয়ে স্বচ্ছতা হওয়া উচিত। এমনকি টেস্টের কিটের ব্যবহারে সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া উচিত।
মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ বলেন, করোনা শুধু আমাদের দেশের চ্যালেঞ্জ না, সারাবিশ্বের চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে এই মহামারি মোকাবিলা করেছে, তার প্রশংসা করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন। তরুণ আরও দুই হাজার ডাক্তার ও চার হাজার নার্স নিয়োগ দেবে সরকার। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে একশ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে এবারের বাজেটে, চিকিৎসকদের জন্য প্রণোদনা চালু করেছে। এগুলো ভালো সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, করোনার এই মহাসংকটে প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মী কাজ করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, ছাত্রলীগের সেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে বাড়ির মালিকদের বুঝিয়ে এই সমস্যার সমাধান করছি। করোনার শুরুতেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অসহায় কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো ব্যক্তি মারা গেলেও কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক হয়ে তাদের কিন্তু জানাজা ও দাফন করছে। স্বাধীনতার আগ থেকে এখন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে।
ছাত্রলীগ সভাপতি আরও বলেন, আমরা ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ অ্যাপের মাধ্যমে সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। নেত্রী আমাদের প্রশংসা করেছেন একাধিকবার। সুতরাং ছাত্রলীগের যেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে, তা ধারণ করে আমরা কাজ করতে পারব। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পাশে থাকব।
মিশন সেভ বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান কাদির বলেন, ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। তখনই আমরা ভাবি কিছু করতে হবে। আমরা প্রথমে পাঁচটি এলাকায় দুই হাজার রিকশাচালকদের খাবার দেই, একহাজার টাকা করে ১০ দিনের খাবার দেওয়া হয়। করোনায় কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত সরকার থেকে অনুমতি পাই। এরপর আমরা সরকারকে সহায়তা করি বিভিন্নভাবে। আমরা প্রায় দুই কোটি টাকা ফান্ড রেইজ করেছি। এরপরে সাকিব আল হাসান আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর আমারা ১২১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। আমরা যে যেখানে আছি আমরা যেন সেভাবে সহয়তা করি। অনেক ভালো কিছু হচ্ছে এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিলে আমরা আরও দ্রুত সাড়া দিতে পারব।
এর আগে, বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিকের ৯টি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগের পর্বটি প্রচারিত হয় গত ৪ জুলাই। করোনা মোকাবিলায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে সাজানো ওই পর্বে অন্যতম আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।
আওয়ামী লীগ আল নাহিয়ান খান জয় ইমরান কাদির উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান এ কে এম এনামুল হক শামীম ওয়েবিনার খাদিজাতুল আনোয়ার সনি জিনিয়া কবির সূচনা ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ