অভিবাসনে করোনার আঘাত মোকাবিলায় ‘বৈশ্বিক পদক্ষেপ’ নিতে ৩ পরামর্শ
৮ জুলাই ২০২০ ২৩:২৭
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির আঘাত মোকাবিলায় সব দেশের অংশগ্রহণে একটি জোরালো ‘বৈশ্বিক পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে তিন দফা পরামর্শ উপস্থাপন করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাইরাসটি বৈষম্যমূলক আচরণ করে না। তবে এর প্রতিকূল প্রভাবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন, বিশেষত অভিবাসী ও নারী শ্রমিকদের ওপর মারাত্মক বৈষম্য তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতিতে এখন সব দেশ, সব আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ, সংগঠন ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি জোরালো ও সুসংহত বৈশ্বিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বুধবার (৮ জুলাই) সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ভার্চুয়াল বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনে ‘বৈশ্বিক নেতাদের দিবস’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। করোনাভাইরাসের কারণে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যে তিন দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন, সেগুলো হলো— এই সংকটের সময় বিদেশের বাজারগুলোতে অভিবাসী কর্মীদের চাকরি বজায় রাখতে হবে; প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে, ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করার পাশাপাশি তাদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে; এবং মহামারির পরে অর্থনীতি ফের সক্রিয় করতে এই শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে হবে।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও সংকট মোকাবিলায় গৃহীত ব্যবস্থাগুলোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএলও’র প্রচেষ্টাগুলো প্রশংসনীয়। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারিতে আইএলও’র গ্লোবাল লিডারস দিবসে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এ মহামারি আমাদের দেশ, বিশেষত আমাদের শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী এই বিপর্যয় এখন বিশ্বায়ন ও যোগাযোগের মূল ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যা আমরা সুদীর্ঘ সময় ধরে অনেক যত্নে গড়ে তুলেছি। এটি এখন কেবল স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য সংকটের মতো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোই কোভিড মহামারির মূল বোঝার মুখোমুখি হচ্ছে, যদিও এই সংকট তাদের দিয়ে শুরু হয়নি।
তিনি বলেন, এই মহামারির কারণে আমাদের দেশীয় ও বৈদেশিক সরবরাহ চেইনগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা কয়েক বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ হারিয়েছি। আমাদের অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে এবং লাখ লাখ শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র শিল্প তাদের বেশিরভাগ সম্পদ ও বাজার হারিয়েছে এবং সর্বোপরি সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণে কৃষি ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সংকট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের জন্য ১২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন অংশের জন্য সহায়তা ঘোষণা করে। এই সহায়তা প্যাকেজ আমাদের জিডিপির ৩ দশমিক ৭০ শতাংষের সমান। রফতানি শিল্পে আমাদের শ্রমিকদের সহায়তা দিতে আমরা শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য প্রায় একশ কোটি ডলার দিয়েছি।
বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের ব্যাপক হারে চাকরি হারানো এবং এর ফলে রেমিট্যন্স কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসডিজি অর্জনে রেমিট্যান্স একটি মূল উপাদান হওয়ায় এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। বর্তমানে এই চাকরিবিহীন শ্রমিকদের প্রত্যাবাসন এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, আমরা ২০ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্স আয় হারাতে পারি। এ পরিস্থিতিতে আমরা আইএলও’র শতবর্ষের ঘোষণার কথা স্মরণ করতে পারি, যেখানে আমরা সবাই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, জনসংখ্যা স্থানান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বায়নের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বকে রূপান্তরিত করার প্রয়াসকে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, জি-৭, জি -২০, ওআইসিডি ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সমর্থিত সব পুনরুদ্ধার ব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, সবার জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি এককভাবে পূরণ করা কঠিন হবে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা একযোগে এটি করতে পারব।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আইএলও মহাপরিচালক গাই রাইডার। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়েসাস এবং সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, ফিজি, থাইল্যান্ড, নেপাল, সামোয়া, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং ডব্লিউটিও’র ডিজি ও আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বাসস।
অভিবাসন আইএলও করোনার আঘাত করোনার প্রভাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক নেতাদের দিবস