কী থাকছে পশুর হাটের স্বাস্থ্যবিধিতে
৯ জুলাই ২০২০ ০৮:২৬
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির কোনো উন্নতিই হয়নি দেশে। দিন দিন বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। তারপরও ঈদুল আজহা সামনে রেখে এরই মধ্যে কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে বলে জানিয়েছে তারা। পশুর হাটের সেই স্বাস্থ্যবিধি ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরই মধ্যে অধিদফতরের পক্ষ থেকে কুরবানির হাটের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য একটি সম্ভাব্য নির্দেশনাও প্রস্তুত করা হয়েছে। সেটি পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সেখানে পর্যবেক্ষণ শেষে এই নির্দেশনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনসাধারণকে জানানো হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে এখনো কাজ করছি। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেই স্বাস্থ্যবিধি চূড়ান্ত করা হবে।
অধিদফতর সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নির্দেশনাগুলো কয়েক ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির হাট কমিটির জন্য আলাদা নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে প্রস্তাবনা অনুযায়ী।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী হাট কমিটির জন্য যেসব নির্দেশনা থাকতে পারে, সেগুলো হলো—
১। হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে। কোনো অবস্থায় বদ্ধ জায়গায় হাট বসানো যাবে না;
২। হাট বসানোর আগে মহামারি প্রতিরোধ সামগ্রী, যেমন— মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার পানি সরবরাহ ও হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল সাবান/সাধারণ সাবানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
৩। পশুর হাটের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও হাট কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাট কমিটির সবার ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করা এবং মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে;
৪। হাটে যুক্ত সব কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা দিতে হবে। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো, যেমন— মাস্কের সঠিক ব্যবহার, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার, শারীরিক দূরত্ব, হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি সার্বক্ষণিক মাইকে প্রচার করতে হবে;
৫। মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা হাটে প্রবেশ করতে পারবেন না। হাট কর্তৃপক্ষ চাইলে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করতে পারেন বা এর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন;
৬। প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশনের ডিজিটাল পর্দায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করতে হবে;
৭। গরুর হাটে প্রবেশের জন্য গেট (প্রবেশপথ ও বাহিরপথ) নির্দিষ্ট করতে হবে;
৮। পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাঊডার দিয়ে পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি করা যাবে না;
৯। প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এক বা একাধিক স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টিম গঠনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মেডিকেল টিমের কাছে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য ডিজিটাল থার্মোমিটার রাখা যেতে পারে, যেন প্রয়োজনে হাটে আসা সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করা যায়। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আলাদা করে রাখার জন্য প্রতিটি হাটে একটি আইসোলেশন ইউনিট (একটি আলাদা কক্ষ) রাখা যেতে পারে;
১০। একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমনভাবে রাখতে হবে যেনো ক্রেতারা কমপক্ষে ৩ ফুট বা ২ হাত দূরত্ব বজায় রেখে পশু কিনতে পারেন;
১১। ভিড় এড়াতে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল আদায় কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে;
১২। মূল্য পরিশোধের সময় সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ানোর সময়কাল যেন কম হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। লাইনে দাঁড়ানোর জন্য ৩ ফুট বা কমপক্ষে ২ হাত দূরত্বে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করার প্রয়োজনে রেখা টেনে বা গোল চিহ্ন দিয়ে দিতে হবে;
১৩। সব পশু একসঙ্গে হাটে প্রবেশ না করিয়ে হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পশু প্রবেশ করাতে হবে;
১৪। হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করা সম্ভব— এমন সংখ্যক ক্রেতাকে হাটে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। অবশিষ্ট ক্রেতারা হাটের বাইরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করবেন। একটি পশু কিনতে এক বা দুই জনের বেশি ক্রেতা হাটে প্রবেশে করবেন না;
১৫। অনলাইনে পশু কেনাবেচার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা যেতে পারে;
১৬। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সব কাজ নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকেও কোরবানির হাটে কেনাবেচার জন্য আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। এই নির্দেশনায় যেসব বিষয় থাকতে পারে, সেগুলো হলো—
১। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে;
২। সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ হাটে প্রবেশ করবেন না;
৩। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা হাটে আসতে পারবেন না;
৪। পশুর হাটে প্রবেশের আগে ও বের হওয়ার সময় তরল সাবান বা সাধারণ সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা যারাই আসবেন, তাদের হাট কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সকল নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
পশুর হাটের বাইরে পশু কোরবানির সময়ের জন্যও কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তারা বলছে, পশু কোরবারির সময় প্রয়োজনের বেশি লোকজন একত্রিত হবেন না এবং কোরবানির মাংস সংগ্রহের জন্য একসঙ্গে বেশি লোক চলাফেরা করতে পারবে না। পশুর চামড়া দ্রুত অপসারণ করে কোরবানির নির্দিষ্ট স্থানটি ব্লিচিং পাউডারের দ্রবণ দিয়ে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
এর আগে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোররবানির পশুর হাট করার নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। তবে তার মানে এই নয় যে যেখানে সেখানে গরুর হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হবে। অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে এই গরুর হাটগুলো বসানো হবে।