Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুল্ক কমানো নয়, চালের বাজারে মনিটরিং চান মিলার-আমদানিকারকরা


৯ জুলাই ২০২০ ১১:০৬

ফাইল ছবি

ঢাকা: বাজার স্থিতিশীল করতে চালের আমদানি শুল্ক কমানো মোটেই ঠিক হবে না বলে মনে করছেন মিলার ও চাল আমদানিকারকরা। হুট করে এই সিদ্ধান্ত নিলে উল্টো কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা তাদের। গত বছর দাম না পেয়ে কৃষক মাঠেই যে ফসল পুড়িয়ে ফেলেছিলেন— সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন তারা। একইসঙ্গে তারা শুল্ক কমানোয় ২০১৭ সালে আমাদানি করা চালে যে বাজার সয়লাব হয়েছিল, তাও স্মরণ করিয়ে দেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। দাম যতটুকু বাড়ার, আগেই বেড়েছে। শুল্ক না কমিয়ে বরং চালের বাজারে আরও মনিটরিং বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

আগে চালের আমদানি শুল্ক ছিল ২৮ শতাংশ। গত বছর ধানের দাম না পেয়ে কৃষক মাঠেই ফসল পুড়িয়ে ফেলায় মে মাসে সরকার এই শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করে ৫৫ শতাংশে উন্নীত করে। এতে আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে দেশীয় চালের দাম কিছুটা বেড়েছিল। এতে কৃষক উপকৃত হয়েছিল বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে বোরোর বাম্পার ফলনের পরও এ বছর চালের দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে মিনিকেট ৫৫ টাকা, আটাশ ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ টাকা ও স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চালের দাম পড়ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা, আটাশ ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা, স্বর্ণা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ টাকা ও নাজিরশাইল ২৩০০ থেকে ৩১০০ টাকা। অন্য বছর এই সময় প্রতি বস্তা মিনিকেট ২১০০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হয় বলে চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতে সরকারও বলছে, অবৈধভাবে চাল মজুত করা হয়েছে। কারসাজি করে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার (৭ জুলাই) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কারসাজি ঠেকাতে ও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে প্রয়োজনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রয়োজনমতো চাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে।’

ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে এবং কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে। তা সত্ত্বেও চালের বাজার অস্থিতিশীল করা হলে এবং চালকল মালিকরা সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী সরকারি খাদ্যগুদামে সঠিক সময়ের মধ্য চাল সরবরাহ করতে গড়িমসি করলে কৃষকের স্বার্থ ও চালের বাজার দর— উভয়ের মধ্যে সমন্বয় করে প্রয়োজনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রয়োজন মতো চাল বিদেশ থেকে আমদানি করার কথা ভাবছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমন ভাবনা হঠাৎ করে নয়। আমরা নিয়মিত বৈঠক করছি। মনিটরিং করছি। কিন্তু চালের বাজার এক-দুই টাকা করে বেড়ে গেছে। কিন্তু এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আম্পানে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কৃষকের কথা আমরা চিন্তা করব। একইসঙ্গে ভোক্তাদের কথাও চিন্তা করতে হবে। এ বছর আমাদের ৮ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ধান সংগ্রহ করার কথা। এখন পর্যন্ত মাত্র ৮৮ হাজার টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছি। তার মানে কৃষক ধানের দাম পাচ্ছে। আর আমরা বলেছি, প্রয়োজন হলে শুল্ক কমিয়ে আমদানি করা হবে। এমন না যে ২০১৭ সালের মতো আমদানি করার সুযোগ থাকবে। যদি প্রয়োজন হয় ঠিক ততোটুকুই আমরা আমদানি করব।’

তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় বললেও চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছেন কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে চাল আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকেই চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।’

এদিকে, চালের আমদানি শুল্ক কমালে তা মিলার-কৃষক ‍দুই পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৭ সালের ঘটনা আপনাদের মনে থাকার কথা। তখন শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি করে বাজার সয়লাব করা হয়েছিল। পরে কৃষক আর ধানের দাম পাচ্ছিল না। এখন আবার শুল্ক কমালে ২০১৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এতে কৃষকও মরবে, মিলারাও মরবে।

হুট করে শুল্ক কমানোর বিপক্ষে বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনটির সভাপতি শাহ আলম বাবু সারাবাংলাকে বলেন, এখন চালের মজুত কতটুকু আছে, সেটা আগে দেখা উচিত। মিলার ও কৃষকদের কাছে কী পরিমাণ মজুত আছে, তার তথ্য এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই। সরকারকে আগে এই তথ্য পর্যালোচনা করতে হবে। হুট করে শুল্ক কমিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। এখন যদি শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়, এটার অনেক বড় প্রভাব পড়তে পারে। কৃষক অবশ্যই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই কৃষকরা নাজুক অবস্থায় রয়েছেন। এ অবস্থায় দেশের বাজার বিদেশি চাল ঢুকলে কৃষকরা বিপদে পড়ে যাবেন।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারের দোকান মের্সাস হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, চালের বাজার এখন স্থিতিশীল আছে। দাম যা বাড়ার, আগেই বেড়ে গেছে। নতুন করে এখন আর দাম বাড়েনি। এসময় মিনিকেট ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা বস্তায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা বস্তায়।

আমদানি শুল্ক কমালে বাজারে কেমন প্রভাব পড়তে পারে— জানতে চাইলে পাইকারি বাজারের এই চাল ব্যবসায়ী বলেন, অবশ্যই ভালো হবে। বাজারে চালের দাম কমে আসবে। মিলার বা চালের ব্যবসায়ী যাদের কাছেই স্টক রয়েছে, তারা তা দ্রুত বাজারে ছেড়ে দেবে।

আমদানি শুল্ক কমানোর চেয়ে বরং চাল বিক্রিতে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদার করার দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, চালের বাজারের সংকট তো সাপ্লাইয়ের না। ফসল কাটার সময় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। করোনার সময়েও সরকারের সহায়তায় কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পেরেছে। আর করোনার কারণে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করছে। খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করছে। আগে যে পোল্ট্রির ব্যবসা করতেন, তিনিও এখন দোকানে চাল রাখছেন। আর করোনায় ত্রাণ হিসেবে অনেক চাল দিয়েছেন। করোনায় সব মিলিয়ে বাজারে চালের সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটতে পারে। এ মুহূর্তে সরকারকে দ্রুত ধান ও চাল কিনতে হবে।

ড. নাজনীন বলেন, সাধারণ মানুষ যেন কম দামে চাল পায় সেটি নিশ্চিত করতে ওএমএসর পরিবর্তে খোলা বাজারে কম দামে চাল বিক্রি করতে হবে। আমদানি শুল্ক কমালে চালের বাজারে প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। বরং অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করে খোলা বাজারে স্বল্পমূল্যে চাল বিক্রি করা প্রয়োজন।

আড়ত চাল বাজার মিলার সিদ্ধান্ত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর