ডাক্তার-নার্সের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না অভ্যন্তরীণ ৩ বিমানবন্দর
১০ জুলাই ২০২০ ১৪:২৭
ঢাকা: চলমান করোনা মহামারিতে নাজেহাল পুরো বিশ্ব। পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা চেপে বসেছে। বলতে গেলে অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি অচল। আর এই সময়ে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিমান খাত। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকার পর কিছু ফ্লাইট চালু হলেও যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে বিমান সংস্থাগুলোকে। এই সময়ে অভ্যান্তরীণ বিমানবন্দরগুলো চালু থাকলে হয়তো লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ ৩টি বিমানবন্দর চালু করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। ফলে চালু করা যাচ্ছে না কক্সবাজার, বরিশাল ও রাজশাহী বিমানবন্দর।
সোমবার (৬ জুলাই) সারাবাংলার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ তিনটি বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে কথা হয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরগুলো চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী দিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দফায় দফায় চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরগুলো চালু করতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আইকাও এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুবিধা না থাকায় বিমানবন্দর তিনটি চালু করা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদাসীনতা সবচেয়ে বেশি দায়ী। কেননা একটি বিমানবন্দর চালু করতে নূন্যতম দুজন ডাক্তার (তিনজন প্রয়োজন), দুজন নার্স (তিনজন প্রয়োজন) আর কিছু স্বাস্থ্যকর্মী লাগে। সঙ্গে একটি অ্যাম্বুলেন্স লাগে, সেটা আমাদের রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর বিমানবন্দরগুলো চালু করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার-নার্স দিতে পারছে না।’
মফিদুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার রুটে যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় বিমানবন্দরগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি সবসময় সর্বাত্মকভাবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি। কক্সবাজার, বরিশাল ও রাজশাহী বিমানবন্দর চালু হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানখাত অনেকটা লাভবান হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বারবার চিঠি দিলেও বিষয়টি তারা আমলে নিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর ও যশোর বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব হয়েছে। কারণ এই বিমানবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা রয়েছে। সৈয়দপুর ও যশোরে স্থানীয় সিভিল সার্জন অফিস থেকে ডাক্তার ও নার্স দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রস্তুত আছি, ডাক্তার-নার্স দিলেই অন্য তিন অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর চালু করা হবে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
এদিকে বেবিচক বলছে, আইকাওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইট চলাচল চালু করতে হলে বিমানবন্দরে অবশ্যই চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কেননা বিমানে বা বন্দরে একজন রোগী অসুস্থ বোধ করলে বিমানবন্দরে নেমে যেন প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন। অর্থাৎ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা না থাকলে বিমানবন্দর চালুর অনুমতি দেওয়া যাবে না বলেও আইকাওয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান যে অবস্থা সেখানে অভ্যন্তরীণ অন্য তিনটি রুট চালু হলে যাত্রী বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসঙ্গে ঈদকে সামনে রেখে করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে। বিমানবন্দরগুলো চালু হওয়ামাত্রই আমরা যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত আছি।’
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বহির্বিশ্ব আমাদের ছোট করে দেখছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য। যেসব দেশ বাংলাদেশে বিমান চালাতে এগিয়ে এসেছিল সেসব দেশ কিন্তু পিছিয়ে যাচ্ছে। কারণ আমরা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছি না। আমি মনে করি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশন এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিমান খাত নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। দেশকে এগোতে হলে স্বাস্থ্য খাত তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরও সচেষ্ট হতে হবে। লোক না থাকলে লোক নিয়োগ দিতে হবে। নয়তো বিমান খাত একদম ধ্বংস হয়ে যাবে ‘
এর আগে ২৪ মার্চ থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পরে ১ জুন ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর এবং ১১ জুন থেকে যশোর রুটে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমানে রুটগুলোতে সীমিত আকারে ফ্লাইট চলাচল করছে।