এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন নিয়ে ‘বিভেদ’ জাতীয় পার্টিতে
১১ জুলাই ২০২০ ১৮:২০
ঢাকা: আগামী ১৪ জুলাই সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এ কর্মসূচি পালন নিয়ে জাতীয় পার্টির কেদ্রীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভেদ-মতানৈক্য। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাইছেন, এইচ এম এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে ব্যাপকভাবে কাঙালি ভোজসহ মিলাদ মাহফিল এবং আলোচনাসভা করা হোক। এক্ষেত্রে অনেকটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা-পয়সার বিষয়টি।
জাতীয় পার্টির নীতি-নির্ধারকরা সাফ বলে দিয়েছেন জাতীয় পার্টিতে চলছে অর্থনৈতিক সংকট। ফলে এরশাদেও মৃত্যুবর্ষিকী পালন করতে দল থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা করা যাবে না। সারাদেশের জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজ নিজ সক্ষমতা অনুসারে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে পারলে করবে। না হয় না। এ ছাড়া এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি বিষয়ে ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করেননি পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিভেদের দেয়াল।
ঢাকা মহানগরের একজন নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এরশাদ সাহেবের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার জন্য মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেননি। কেন বৈঠক কারেননি তা জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্বের অভাব। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগে ডুবে গেছে। দলীয় এমপিরা রয়েছে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নেওয়া এবং তাদের নিজ নিজ আসন ঠিক রাখার চেষ্টায়।’
ওই নেতা বলেন, ‘দলটির মধ্যে এরশাদ প্রেমিকের খুবই অভাব। এরশাদের কোটি কোটি টাকা গেল কই? শুনতে পাচ্ছি সব টাকা নাকি এখন বিদিশা ও এরশাদ ট্রাস্টের লোকজনের আয়ত্তে।’
এ সব বিষয় নিয়ে দলটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার বিষয়ে দলটির চেয়ারম্যান যা করছেন নিজে নিজেই করছেন। আমি কিছু জানি না। তিনি এরশাদ সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার কর্মসুচি ঠিক করতে ওইভাবে কারও সঙ্গে বৈঠক করেননি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টিতে অর্থ সংকটও রয়েছে। ফলে সারা দেশে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।
এ সব প্রসঙ্গ নিয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাহেব সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেনি। এমন কি তিনি আমাদের এ ব্যাপারে ডাকেননি। আমরা এরশাদ সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে জাতীয় পার্টির মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা আমাদের মতো করে পার্টির প্রতিষ্ঠার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করব।
এদিকে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মসুচির মধ্যে সারাদেশে মসজিদে মিলাদ মাহফিল করার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে ১৪ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে বিমানযোগে রংপুরে যাবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুরে এইচ এম এরশাদের সমাধিস্থলে পুস্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে যোগ দেবেন তারা।
বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় পার্টি বনানী অফিসে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান। ওই দিন সকাল থেকে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইলে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। সকালে সারাদেশে জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
অপরদিকে আগামী ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য দলের পাশাপাশি ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি দুই দিন ব্যাপি মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করবেন।দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, স্মরণসভা, প্রার্থনা সভা, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ । ১৩ ও ১৪ জুলাই নিজ নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর-কদমতলির বিভিন্ন মসজিদ ও মন্দিরে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে দক্ষিণের অন্তর্ভুক্ত ২৪টি থানার শতাধিক মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করার জন্য দক্ষিণের সকল থানার সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা দিয়েছেন বাবলা।
এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ১৪ জুলাই সকাল ১০টায় সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও জহিরুল আলম রুবেলের নেতৃত্বে মহানগরের বিভিন্ন থানা কমিটির নেতারা কাকরাইলে পার্টির কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
নগর জাপা কার্যালয়ে দিনব্যাপী কোরআন খতম ও বাদ আছর মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে । এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সাধারন সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেলে জানান, সাবেক রাষ্টপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রথাম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে মসজিদে মিলাদ মাহফিল করার জন্য বলা হয়েছে। আর ঢাকা মহানগেরর ২৪টি থানার ৭৫টি ওয়ার্ডের মসজিদে বাদ আসর মিলাদ মাহফিল করা হবে।