ঢাকা: করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ভার্চুয়াল কোর্টের ওপর নির্ভর করে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এজন্য তিনি আইনজীবীদের গুরুত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আহ্বান জানান। পর্যায়ক্রমে দেশের সব আইনজীবীকে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রোববার (১২ জুলাই) ‘ভার্চুয়াল আদালত পদ্ধতি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে এবং রুল অব ল’ প্রোগ্রাম, জিআইজেড বাংলাদেশের কারিগরি সহযোগিতায় এ অনলাইন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি বাড়তে থাকলে এই ভার্চুয়াল কোর্টের ওপর নির্ভর করে চলতে হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও যদি ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতিতে এগিয়ে না যাই তাহলে আমরাও পিছিয়ে থাকবো, সমালোচনার সম্মুখীন হবো।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ই-জুডিসিয়ারি চালুর উদ্দোগ নিয়ে কাজ করছিলো। কিন্তু ই-জুডিসিয়ারির নতুন বিষয়গুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের দরকার ছিলো। ঠিক সে সময়ে মার্চ মাসে দেশে করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গেলো এবং সরকার করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে দেশের সকল অফিস বন্ধ করে দিলো। তখন প্রধান বিচারপতিও আদালত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলেন। আমরা দেখেছি প্রায় দুই মাস বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থীরা অত্যন্ত কষ্টে দিনযাপন করেছেন। অন্যদিকে আমাদের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতা হলো ৪১ হাজার ৩১৮ জনের। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষ্য মতে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশব্যাপী কারাবন্দির সংখ্যা ৯৩ হাজার বলে জানতে পারি। এ কারণে কারাগারে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে আমরা বিপাকে পড়ে যেতাম। তাই সে পরিস্থিতি বিবেচনায় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আদেশ দিলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা তা সীমিত পরিসরে হলেও চালু করতে। কেননা, কারাগারের যে পরিস্থিতি তাতে অন্তত পক্ষে জামিন আবেদন ও সে আবেদনের শুনানির ব্যবস্থা না করলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। সেই প্রেক্ষিতে ৯ মে আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ জারি করা হলো।’
ভার্চুয়াল কোর্টের সফলতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে কারাগারের ওপর চাপ আমরা কমিয়ে আনতে পেরেছি। আদালত সচল করতে পেরেছি। বিশ্বের অনেক আদালত করোনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালত চালাতে পেরেছি। কিন্তু আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ ও ভৌত কাঠামো ছাড়া এই আদালত পূর্ণাঙ্গভাবে চালানো সম্ভব না। তাই ভার্চুয়াল কোর্টের সাফল্য ধরে রাখতে আজ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এ প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আইনজীবীদের ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা হবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এ যে প্রাকটিস ডাইরেকশন দেওয়া আছে তার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ প্রয়োজনে বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার করতে পারবে। স্বাভাবিক আদালত স্বাভাবিকভাবে চলবে। কিন্তু সেখানে বিশেষ প্রয়োজনে এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই ভার্চুয়াল আদালত পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। যখন ভৌত কাঠামো এবং প্রশিক্ষিত আইনজীবী তৈরি করতে পারবো তখন আদালতের ও আইনজীবীদের ইচ্ছা পোষণের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালতকে আরও বিস্তার লাভের জন্য চেষ্টা করা হবে। তাই প্রশিক্ষণ এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে ভার্চুয়াল কোর্টকে আমাদের গ্রহণ করে নিতে হবে।’
এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার।