গাজীপুরে অনলাইনে কোরবানির গরু বিক্রিতে সফল হ্যান্ডশেক অ্যাগ্রো
১২ জুলাই ২০২০ ২২:৪২
গাজীপুর: শুরুটা ছিল কোনো এক বিকেলে স্রেফ আড্ডার ছলে। ২০ জন কর্মজীবী যুবক তাদের পেশার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রয়াসে আলোচনা শুরু করেন। আর এই ভাবনা থেকেই শুরু হলো স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে এমন কিছু করা যা তরুণদের মাঝে আশা জাগানিয়া একটা সম্পদ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে আগামীতে।
সে ভাবনা রূপ নেয় ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের প্রথম দিকে। ২০ থেকে ২৫, এরপর ২৫ থেকে ৫০-এ এগিয়ে যায় সদস্যপদ। ৮ জুন ২০১৮ নতুন উদ্যমে শুরু হয় তাদের কর্মযজ্ঞ। প্রথমে গরু মোটাতাজা করে তা বাজারজাত করার প্রক্রিয়া। বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতা আসে প্রথমে দিকে। যেমনটা উদ্যোগতা হলে মেনে নিতে হয়। এই মেনে নেওয়ার মানসিকতা থেকেই সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজ পর্যন্ত এগিয়ে চলছে হ্যান্ডশেক অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড।
গাজিপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ইকুরিয়া বাজারে স্থাপিত হ্যান্ডশেক অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড। যেমনটা বলছিলেন প্রতিষ্ঠানটির তরুণ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া রুবেল। তিনি বলেন, ‘কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করতে গিয়ে গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করার যে প্রকল্পটি শুরু করি, তার প্রথম দিকে বেশ বড় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। খাবারের সংস্থান আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। পরে সাইলেজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বিক্রেতা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করি। অর্থাৎ যেখানে ঠেকেছি, সেখান থেকে শিখেছি। এটাকেই প্রতিবন্ধকতা উতরে যাওয়ার মন্ত্র হিসেবে নিয়ে প্রত্যেকটি অধ্যায় পার করেছি সফলাতার সঙ্গে। তবে বলাবাহুল্য এখানে উপজেলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ তার অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা ছিল আশাপ্রদ।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, কাপাসিয়ায় মোট খামারির সংখ্যা ১ হাজার ৫২০। এদের মধ্যে প্রান্তিক খামারিও রয়েছে। তাদের মধ্যে মধ্য থেকে এবার সর্বমোট ৮ হাজার ৩৬০টি কোরবানির গরু কাপাসিয়া উপজেলার জন্য মোটাতাজা করা হয়েছে। এই উদ্যোক্তাদের আমরা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাংস প্রস্তুত করণ প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। অর্থাৎ স্টেরয়েডহীন খাদ্য প্রস্তুত করে প্রাকৃতিক ভাবে পশু খাদ্য প্রস্তুতে উৎসাহিত করেছি। যার ফলে খামারিরাও লাভবান হয়েছেন এবং তাদের উৎপাদন ব্যয় কমে এসেছে।‘
তবে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা কিছুটা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে আছেন। আতঙ্ক দূর করার জন্য আমরা উপজেলা পশু সম্পদ অফিস এবং খামারিদের সমন্বয় করে একটি অনলাইন বিক্রয়ের প্লাটফর্ম তৈরি করে ফেলেছি। যা ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।
হ্যান্ডশেক অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক কর্মজীবী মাহফুজুর রহমান মামুন জানান, আমাদের স্থানীয় যুবকদের নিজস্ব আমিষের চাহিদা পূরণ করার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং গাজীপুর জেলা তথা দেশের অন্যতম একটি স্বনামধন্য মাংস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রুবেল জানান, ভবিষ্যতে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে যারা পরামর্শ নেওয়ার জন্য আসেন তাদের আমরা নিয়মিতভাবে বৈঠকের আয়োজন করে থাকি। এর প্রভাব সারা উপজেলাতে খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে ইকুরিয়া গ্রামে দুটি গরুর খামার সৃষ্টি হয়েছে পাশাপাশি একটি মহিষের খামারও তৈরি হয়েছে। আমাদের উদ্যোক্তা কমিউনিটির মধ্যে একটি বিষয় প্রতিষ্ঠায় করতে চাচ্ছি যা হচ্ছে ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’। এই মূলমন্ত্রকে সবার সামনে তুলে ধরে আমাদের এই প্রচেষ্টাকে বর্তমান সময়ের প্রান্তিক খামারীদেরকেও ও ঐক্যবদ্ধ করতে চাচ্ছি। আর এই এলাকাটিকে হৃষ্টপুষ্ট গরুখামারের বৃহৎ একটি এলাকায় রূপদানের প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছি। আর তারই ধারাবাহিকাতায় এ বছরে আমারা অনলাইনে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
ইতোমধ্যে রাজধানীসহ আশেপাশের এলাকা থেকে আসা ক্রেতাদের মাঝে আমাদের ২০টিরও অধিক কোরবানির গরু বিক্রি হয়ে গেছে। শহরের ক্রেতাদের স্বার্থে তাদের কেনা গরু আমরা কোরবানির আগেরদিন পৌঁছে দেওবার ব্যাবস্থা রেখেছি।