কেরুর খামারে লোকসান সাড়ে ১৮ কোটি টাকা, ৩৫০ পাহারাদার বরখাস্ত
১৩ জুলাই ২০২০ ১৩:২৬
চুয়াডাঙ্গা: দেশের ঐতিহ্যবাহী চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের কৃষি খামারে ৫ বছরে ১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এই কারণে খামারের ৩৫০ পাহারাদারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে পাহারাদারদের অভিযোগ, জনপ্রতি ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নিয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। চিনিকলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দিন হাজিরার এই পাহারাদারদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের কৃষি খামারগুলো থেকে গত ৫ বছরে ১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৯০ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৭ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এলাকার আখচাষীদের আখ ও কেরুর নিজস্ব বাণিজ্যিক খামারগুলোতে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে আখ চাষ করা হয়ে থাকে। যা থেকে প্রায় ২৫ হাজার টন আখ পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ পরিমাণ আখ উৎপাদন করতে প্রতি বছর চিনিকলের গড়ে খরচ হয় ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রতি বছর এ বাবদ গড়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোকসান হয়ে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
লোকসানের পরেও চিনিকল চালিয়ে রাখার জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নানামুখী অনিয়মের আশ্রয় নেয়। কৃষি খামারের শিডিউল অনুযায়ী শ্রমিকরা কাজ না করেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অতিরিক্ত বিল উত্তোলন, বেশ কয়েকবার খামারের সার চুরি, সেট-আপ অনুযায়ী কৃষি খামারে যে পরিমান পাহারাদার প্রয়োজন, তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পাহারাদারের বিল উত্তোলন করার কারণে প্রতি বছর খামারের লোকসান বেড়েই চলেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধুমাত্র চিনিকল কৃষি খামারের পাহারাদারের বিল বাবদ প্রতি বছর ২ কোটি টাকার উপরে ব্যয় হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন পাহারাদারই সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। ফলে কৃষি খামারে সর্বক্ষেত্রে নানা অনিয়ম পায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন সম্প্রতি কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ বিষয়গুলো রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। সে মোতাবেক চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেরু চিনিকলের ডিজিএম (ফার্ম) মো. হুমায়ুন কবীরসহ সকল ফার্ম ইনচার্জকে জানিয়ে দেন যে দৈনিক পাহারাদারদের খামারে আসার দরকার নেই।
চাকরি হারানো পাহারাদাররা সংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দিন হাজিরায় কেরু কোম্পানির কোটি কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করতাম। আমাদের বাদ দিলেই কি কেরু লোকসান কাটিয়ে উঠবে?’ এখন তারা নিয়োগের সময় নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাইদ জানান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কৃষি খামারগুলোতে লাগাতার লোকসান কমিয়ে লাভে ফিরিয়ে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যারা বাদ পড়েছেন তারা দিন হাজিরায় কাজ করতেন। প্রতিদিন হাজিরা দিয়ে কাজ করানো হতো।’
টাকা নিয়ে পাহারাদার নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়ে কিছুই জানি না। তাদের নিয়োগ আমরা সময়ে হয়নি। এ বিষয়ে আগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী ভালো বলতে পারবেন।’