নন ক্যাডার তালিকা থেকে নিয়োগ চান অপেক্ষমাণ চিকিৎসকরা
১৪ জুলাই ২০২০ ১৮:৪৮
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসে পরিস্থিতিতে মানুষের সেবা করতে চান ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়া চিকিৎসকরা। নন-ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত এই চাকরিপ্রার্থীরা নতুন করে নিয়োগ পেতে যাওয়া আরও ২ হাজার চিকিৎসকের মধ্যে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরই মধ্যে নতুন দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তবে চলমান পরিস্থিতিতে আরও বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন হওয়ায় আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাহিদা জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। তবে এই দুই হাজার চিকিৎসক নতুন করে বিসিএস আয়োজন করে তার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে নন-ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ৩৯তম বিসিএসের আয়োজন ছিল শুধু চিকিৎসকদের জন্য। এখনো ছয় হাজার নন-ক্যাডার চিকিৎসক রয়েছেন নিয়োগের অপেক্ষায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩৯তম বিসিএস ব্যাচের অন্তত আট জন চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেছেন, পদ খালি না থাকায় তাদের নিয়োগ দিতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পদ খালি কিংবা সৃষ্টি হলেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। তারা বলেন, এখন তো পদ সৃষ্টি হচ্ছে, তাহলে নতুন বিসিএস কেন?
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর দেশের মেডিকেল কলেজ থেকে প্রচুর সংখ্যক মেধাবী চিকিৎসক বের হচ্ছেন। তাদের সুযোগ দিতেই এই উদ্যোগ। তাছাড়া ৩৯তম বিসিএস ব্যাচ থেকে আগে দুই দফায় চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবারও যদি সেই একই ব্যচ থেকে নেওয়া হয়, তাহলে গ্যাপ তৈরি হবে।
তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৩৯তম বিসিএসের নন-ক্যাডার চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এখানে কোনো গ্যাপ নেই। গ্যাপের নামে যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আর বার বার মেধাবীদের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আমরা মেধাবী না হলে বিসিএস এ উত্তীর্ণ হলাম কী করে? এভাবে বক্তব্য দিয়ে আমাদের ছোট করা হচ্ছে।
তারা আরো জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাবিশ্বে সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ রাখা হয়েছে, দেশেও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ, উৎসবও স্থগিত রাখা হয়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ৪০ হাজার চাকরিপ্রার্থীর জন্য একটি নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন মানে একটি বড় ধরনের জনসমাগম। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ আয়োজন কেন করা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। তাছাড়া একটি বিসিএস মানে দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেখানে দিন দিন বাড়ছে, সেখানে চিকিৎসক নিয়োগে এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়াটা দেশের বাস্তবতায় বিলাসিতা বলে মনে করছেন তারা।
চিকিৎসকরা আরও জানান, নতুন করে বিসিএস’র আয়োজন করা হলে ৩৮ ও ৩৯তম বিসিএসে যারা উত্তীর্ণ হতে পারেরনি, তারা আবারও অংশ নেবেন। আগের বিসিএসের প্রস্তুতিসহ অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তাদের মধ্য থেকেই উত্তীর্ণ হওয়ার হার বেশি হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে নতুন কত জন সুযোগ পেতে পারে? তাদের অভিযোগ, নতুন করে বিসিএস আয়োজনের পেছনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে।
চিকিৎসকরা বলেন, নতুন যে ২ হাজার চিকিৎসক নেওয়া হবে সেখানে ৩৯তম বিসিএসের নন-ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। আমরা করোনার এই ক্রান্তিকালে মানুষের সেবা করতে চাই। আর সে সুযোগ করে দিতে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে করোনায় ডেন্টাল সার্জনদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ৩৯তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জনরা বলছেন, মে মাসে ৩৯তম বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে ২ হাজার চিকিৎসক নেওয়া হলেও ডেন্টাল সার্জনরা সেখানে সুযোগ পাননি। করোনায় ডেন্টাল পেশা খুব ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে এখন নিয়োগের জন্য তালিকাভুক্ত হতে চান তারাও।
জানা যায়, ৩৯ তম বিসিএসে সাড়ে ৯ হাজার সহকারী সার্জন ও পাঁচশ সহকারী ডেন্টাল সার্জনসহ মোট ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পদ স্বল্পতার কারণে ৪ হাজার ৫৪২ জন সহকারী সার্জন ও ২৫০ সহকারী ডেন্টাল সার্জনসহ মোট ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসককে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর ৮ হাজার ৩৬০ জনকে নন-ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ২৫৩ জন ডেন্টাল সার্জনও রয়েছেন। পরে করোনা পরিস্থিতিতে তাদের মধ্য থেকেই দুই হাজার সহকারী সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এসময় কোনো সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তারা এবার নিয়োগ পেতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেছেন বলে কয়েকজন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন। এদিকে চাকরির জন্য অপেক্ষমাণ ৩৯তম বিসিএসের নন ক্যাডারের তালিকায় আরও ৬ হাজার চিকিৎক আছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে স্বাস্থ্য বিভাগের চাহিদাপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে এরই মধ্যে অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকে অনুমতি এলে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে চিঠি পাঠাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
করোনা পরীক্ষা করোনা মোকাবিলা চিকিৎসক নিয়োগ নতুন নিয়োগ পরীক্ষা নভেল করোনাভাইরাস বিসিএস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়