রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বিধান বহালের দাবি
১৩ জুলাই ২০২০ ২২:১১
ঢাকা: নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের স্তর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বিধান বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধান তুলে নেওয়া হবে সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। পাশাপাশি রাজনৈকি দলের নিবন্ধন আইনে সংশোধন করাও এই মুহূর্তে কোনো প্রয়োজন নেই। বরং নির্বাচন কমিশনের উচিত বিদ্যামান ২০০৮ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ আইন সংশোধন না করে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা। যাতে করে রাজনৈতিক দলগুলো আইন মেনে চলতে বাধ্য হয়।
সোমবার (১৩ জুলাই) বিকালে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সারাবাংলা ডটনেটের সরাসরি আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ নামে এক ভার্চুয়াল সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা এইসব কথা বলেন।
সারাবাংলার বিশেষ প্রতিনিধি এমএকে জিলানীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধান তুলে নেওয়ার উদ্যোগ দুর্ভাগ্যজনক। এটা আমাদের সাংবিধানিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ সংবিধানে নারীর প্রতি বৈষম্য না করার কথা বলা হযেছে। আর এটা তুলে নেওয়া হলে নারীর প্রতি বৈষম্য বাড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কেন এই ধরনের একটা উদ্যোগ নিয়েছে তা আমরা জানি না। এটা সংবিধান সম্মত হবে না। এর মাধ্যমে নারী পুরুষের সমতার বিষয়ে আমাদের জাতি হিসাবে যে অঙ্গীকার রয়েছে, সেই অঙ্গীকার থেকে সরে আসা হবে।’
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্ব হলো আইন প্রয়োগ করা। কিন্তু তারা আইন প্রয়োগ না করে বৈষম্যমূলক আইন করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সমাজে সমতা নষ্ট হবে। ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় সরকারের ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বে পরিবর্তে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। আমাদেরও এটা ৫০ শতাংশ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আইন প্রয়োগ করা। কিন্তু তারা তা কখনো করে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিনিয়ত আইন লঙ্ঘন করেছে কিন্তু ইসি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যেমন অনেক প্রার্থী নির্বাচনের সময় হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলেও ইসি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন সংশোধন করা হলে, নতুন করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নেয়া বাধাগ্রস্থ হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সংবিধানের দোহায় দিয়ে নির্বাচন কমিশন যশোর ও বগুড়ার উপনির্বাচন করার কোনো প্রযোজন ছিল না। এই নির্বাচন পেছানোর জন্য তারা রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে পারতো। নির্বাচনে ভোট দিতে এসে যদি কোনো ভোটার করোনায় আক্রান্ত হয় এর দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় নারীবান্ধব দল হিসাবে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। বর্তমানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে ২০ থেকে ২২ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আগামীতে পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘নারী প্রতিনিধিত্ব ৫০ শতাংশ হলেও আমাদের আপত্তি নেই। রাজনৈতিক দলে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে আমরা সব সময় কাজ করছি। তবে বিএনপি জামাত নারীর ক্ষমতায়ন চায় কি না এটা আমার সন্দেহ রয়েছে।‘
তিনি বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল আছে যাদের কোনো অফিস নেই, নির্বাচন করার সক্ষমতা নেই, যাদের কোনো কর্মী নেই। এইসব ভূইফোঁড় দলগুলোর বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। আমরা চাই যারা সত্যিকারের রাজনৈতিক দল তারা নিবন্ধন নিয়ে রাজনীতি করুক।’
আওয়ামী লীগের এই সাংগিঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি করার সক্ষমতা নাই। তাদের মিছিল মিটিং সমাবেশ করার সামর্থ নেই। ৫০ হাজার লোক নিয়ে একটা সভা সমাবেশ করতে পারে না। অথচ তারা ঘরে বসে বড় বড় কথা বলে বেড়ায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে আহমদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণেই যশোর ও বগুড়ায় উপনির্বাচন করতে হচ্ছে। এছাড়া কমিশনের কোনো বিকল্প ছিল না।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘বিএনপি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন স্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখাকে সমর্থন করে। ইতোমধ্যে বিএনপির বিভিন্ন স্তরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আগামীতে আমরা এটা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করবো। কিন্তু রাজনৈতিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া না থাকায় নারীরা এখন রাজৈনীতিতে উৎসাহিত হচ্ছে না। নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিএনপি সব সময় কাজ করছে। বিএনপির খালেদা জিয়ার সরকার প্রথম নারীদের শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি চালুসহ দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে বসে সভা সমাবেশ করতে পারছে না। এই অবস্থা নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ অগ্রহণযোগ্য। ইসির উচিত করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করার জন্য কোনো রাজনৈতি দল কিংবা সুশীল সমাজের দাবি করেনি। তারপরেও কেন ইসি এই ধরনের উদ্যোগ নিল, তা রহস্যজনক। ইসির প্রধান কাজ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারে সেই পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু ইসি তা করতে সম্পৃন্ন ব্যার্থ হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘করোনাকালে উপনির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে কোনো নাগরিক যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে ইসির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘আওয়ামলীগের নির্বাচনি ইশতেহারে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে। ফলে রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখা দরকার। প্রযোজনে তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করাকেও আমি সমর্থন করি।‘