Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টাকার কুমির এনু-রুপন, মঙ্গলবার চার্জশিট: সিআইডি


১৪ জুলাই ২০২০ ১৯:২৫

ফাইল ছবি

ঢাকা: অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে জড়িয়ে মাত্র পাঁচ বছরেই দুই ভাই মিলে টাকার কুমির হয়েছেন। টাকার জোরেই দুই ভাই বাগিয়েছিলেন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের দু’টি পদ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে উঠে এসেছে— জমিসহ ২০টি বাড়ি, ১২০টি ফ্ল্যাট, ২৫ কাঠা জমি ছাড়াও ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৯ কোটি টাকা আছে এনু-রুপন দুই ভাইয়ের। সিআইডি বলছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে চার্জশিট তৈরির কাজও শেষ। আগামী মঙ্গলবার (২১ জুলাই), অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সিআইডির ডিআইজি (অর্গানাইজড ক্রাইম) ইমতিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ক্যাসিনোতে জড়িত দুই ভাইয়ের উত্থান মূলত ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সেক্রেটারি জয় গোপালের হাত ধরে। সম্প্রতি জয় গোপালকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এনু-রুপনের বেশিরভাগ সম্পদই দেশে। দু’জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত কাজও শেষ।

এনু-রুপনের উত্থান সম্পর্কে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ২০০৭ সাল থেকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ওয়ানটেন খেলা হতো। সেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে খেলা হতো। এনু-রুপনের উত্থান পারিবারিকভাবে। তাদের বাবা জুয়াড়ি ছিলেন। রাজধানীর সদরঘাটেই ছিল তাদের জুয়ার আড্ডা। সেখানেই তাদের পেশাদার জুয়া কার্যক্রমের শুরু। এরপর ২০১৪ সালে বড় পরিসরে ক্যাসিনো কার্যক্রম শুরু হয় ইউরোপীয় আদলে। সেখানে তারা অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করতে শুরু করেন। এরপরই তারা টাকার কুমির হয়ে যান।

সিআইডি’র তথ্য অনুযায়ী, দুই ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা গেছে, তাতে জমা ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা। আদালতের আদেশে এসব টাকা জব্দ করা হয়েছে। পুরান ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর এলাকায় সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখেন ক্যাসিনো কারবারি এই দুই ভাই।

‘ক্যাসিনো ব্রাদার’ এনু-রুপন কী পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন— জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ঢাকা ও এর আশপাশে গড়েছেন জমিসহ ২০টি বাড়ি, ১২০টি ফ্ল্যাট। এর বাইরেও জমি রয়েছে ২৫ কাঠা। ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তাদের স্থিতিশীল টাকার পরিমাণ ১৯ কোটি হলেও লেনদেন করেছেন ২০০ কোটি টাকারও বেশি। তারা যত সম্পদ গড়েছেন, তা সবই ক্যাসিনো থেকে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই। তাদের আরও সম্পদের তথ্য খোঁজ করতে আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুসন্ধান করছি।

বিজ্ঞাপন

সিআইডি বলছে, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে জড়িত কয়েকজন এজেন্টকে সিআইডি গ্রেফতার করে। আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতেই মূলত উঠে আসে সেক্রেটারি জয় গোপালের নাম। তার তত্ত্বাবধানেই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর যাত্রা। এসব তথ্য পাওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

জয় গোপাল সম্পর্কে ডিআইজি ইমতিয়াজ বলেন, ক্যাসিনোতে জড়িত থাকার তথ্য আসার পর ৯ মাস আগেই আত্মগোপনে যান জয় গোপাল। সম্প্রতি আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। আমরা আশা করছি, জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাব।

এনু-রুপনের ক্যাসিনোতে কাদের যাতায়াত ছিল— এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, এনু-রুপনের বিরুদ্ধে চলমান চারটি মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দিচ্ছি। যারা জড়িত, তাদের সবার নাম আমরা মামলার চার্জশিটে রেখেছি। এনু-রুপনের বড় ভাই রশিদ ভূঁইয়া সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে এবং তাকেও ধরা হবে বলে জানান ডিআইজি ইমতিয়াজ।

ক্যাসিনোগুলোতে প্রতি রাতেই বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেন হতো বলে জানান ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, এটার সঠিক পরিমাণ বলা সম্ভব নয়। যাদের নামে এত সম্পদ রয়েছে, তাদের আয় কত, বুঝতেই পারছেন। আর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে তারা এই সম্পদ গড়েছেন। লেনদেনও এই সময়েই সবচেয়ে বেশি। দেশের বাইরে তারা সম্পদ পাচার করেছেন কি না, সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে অনুসন্ধানে যেটা মনে হয়েছে, তাদের ক্যাসিনোতে অর্জিত অর্থ তারা বাড়ি, ফ্ল্যাট, অলংকারের পেছনে ব্যয় করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মূলত তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা তদন্ত করছি। গেন্ডারিয়া থানার মামলায় ১৬ জন, সূত্রাপুরের দু’টি মামলায় ১৫ ও ১০ জন এবং ওয়ারীর মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আগামী মঙ্গলবার, অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করব।

২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রুপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরও দু’টি মামলা হয়।

অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও এনু-রুপনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দু’টি মামলা করে। মামলায় এনুর বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এবং রুপনের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তবে দুদক এখনো আদালতে কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

এনু-রুপন এনু-রুপনের সম্পদ চার্জশিট মানি লন্ডারিং মামরা সিআইডি

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর