Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাজারো ভক্তের শেষ শ্রদ্ধা নিয়ে অন্তিম শয্যায় আর্চবিশপ মজেস কস্তা


১৫ জুলাই ২০২০ ০১:৩৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ধর্ম, শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে হাজারো ভক্তের শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে অন্তিম শয্যায় শায়িত হয়েছেন চট্টগ্রামে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু মজেস এম কস্তা। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ ছিলেন।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় রাণী জপমালা ক্যাথিড্রাল গির্জায় আর্চবিশপের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হয়। এতে পৌরিহিত্য করেন বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মিলনীর চেয়ারম্যান কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও। এরপর ছায়া সুনিবিড় গির্জা প্রাঙ্গণেই মজেস কস্তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে মজেস কস্তার জীবনাবসান হয়। ঢাকার তেজগাঁও ধর্মপল্লী ও গাজীপুরের কালীগঞ্জে তার বাড়িতে ঘুরিয়ে মরদেহ রাতে আনা হয় চট্টগ্রামে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য পাথরঘাটা গির্জার প্রধান ফটক ‍খুলে দেওয়া হয়। দূর-দূরান্ত থেকে খ্রিস্টভক্ত ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকজন, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুল দিয়ে প্রয়াত আর্চবিশপকে শ্রদ্ধা জানান। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে উদার, অসাম্প্রদায়িক এই ধর্মগুরুর জন্য অনেকেই আবেগাক্রান্ত হন।

শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ’আর্চবিশপ মজেস এম কস্তা খ্রিস্টান ব্যক্তিত্ব হলেও তিনি চট্টগ্রামের সব ধর্মের শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। আমরা একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষকে হারালাম। উনি এমন জীবন গঠন করেছেন, যার মৃত্যুতে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা উনার জীবনাচারকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ ও অনুসরণ করব।’

আরও পড়ুন- আর্চবিশপ মজেস কস্তা’র জীবনাবসান

স্মৃতিচারণ করে কার্ডিনাল প্যাট্রিক বলেন, ‘বিগত ২৪ বছর ধরে, সেই ১৯৯৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত তিনি প্রথমে ১৫ বছর দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশে এবং বৃহত্তর চট্রগ্রাম ধর্মপ্রদেশে ছয় বছর তিনি ধর্মপাল ছিলেন। চট্টগ্রামকে আর্চডায়োসিস হিসেবে নির্মাণে তার বিরাট ভূমিকা আছে। গত আড়াই বছর ধরে চট্টগ্রাম মহাধর্মপ্রদেশের মহাধর্মপাল হিসেবে নিরলসভাবে, দৃঢ়তার সাথে এবং কষ্টভোগী সেবক হিসেবে তিনি কাজ করেছে। আর্চবিশপ মজেস ছিলেন দরিদ্র, সংখ্যালঘু, পাহাড়ি এবং ন্যায় ও মানবাধিকার বঞ্চিত জনগণের আশ্রয়।’

কারিতাস, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ বলেন, ‘আমরা খ্রিস্টভক্তরা আমাদের বড় একজন অভিভাবককে হারিয়েছি। আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এই শোক আমাদের বহন করার শক্তি দেন। আর্চবিশপ শুধু খ্রিস্টসম্প্রদায়ের অভিভাবক ছিলেন না, তিনি আন্তঃধর্মীয় সম্মিলন ও সৌহার্দ্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি যা করেছেন একেবারে হৃদয় থেকে করেছেন। সেজন্য তিনি ধর্মবর্ণ সবার মধ্যে শ্রদ্ধার পাত্র হতে পেরেছেন।’

আর্চবিশপ মজেস এম কস্তার মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের দফতর থেকে শোক প্রকাশ করেছেন কার্ডিনাল টাগ্লে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক চসিকের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীও শোক প্রকাশ করেছেন।

মজেস এম কস্তা চট্টগ্রামের বিশপ হিসেবে মনোনীত হন ২০১১ সালের ৬ এপ্রিল। একই বছরের ২৭ মে তিনি চট্টগ্রামের বিশপ হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি দিনাজপুর ডাইয়োসিসের বিশপ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামকে আর্চডাইয়োসিসে উন্নীত করা হলে মজেস এম কস্তাকে চট্টগ্রামের প্রথম আর্চবিশপ হিসেবে নিযুক্ত করেন পোপ ফ্রান্সিস।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ ধর্মগুরু মজেস এম কস্তা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর