Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় বেহাল মৌলভীবাজারের পর্যটন খাত, ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক লাখ মানুষ


১৫ জুলাই ২০২০ ০৮:৩৪

মৌলভীবাজার: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চায়ের শহর, পর্যটনের শহর মৌলভীবাজার। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশের অন্যান্য এলাকার মতো মার্চেই বন্ধ করে দেওয়া হয় জেলার সব পর্যটন স্পট। একইসঙ্গে গণপরিবহন বন্ধ তো বটেই, চলাচলেও সারাদেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় ওই সময়। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল হলেও পর্যটন স্পটগুলো চালু করার অনুমতি মেলেনি। ফলে পর্যটনের জেলা হয়েও হোটেল-মোটল-রিসোর্ট সবই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাতে মালিকদের ক্ষতির অঙ্ক ক্রমেই বাড়ছে। একইসঙ্গে দুর্দশা বাড়ছে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল কয়েক লাখ ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষের।

বিজ্ঞাপন

মৌলভীবাজার জেলায় লাউয়াছড়া বন, হাওর, বাইক্কা বিল, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, চা বাগান, আনারস বাগান, পান, আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা ও তাদের হস্তশিল্প, বর্ষীজোড়া ইকো পার্ক, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ প্রায় দেড়শ পর্যটন স্পট সারাবছর পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকত। সেসব জায়গায় এখন সুনসান নীরবতা।

মৌলভীবাজার জেলার রেস্ট হাউস, রেস্তোরাঁ, হোটেল, রিসোর্টসহ এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে চার মাস ধরে। বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে গুনতে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালু রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বেকার হয়ে পড়েছেন ট্যুর গাইডসহ এ খাতের ওপর নানাভাবে নির্ভরশীল পরিবারগুলো। এতদিন পর্যটকদের সেবা দিয়ে আসা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের জীবন-জীবিকাও থমকে আছে।

শ্রীমঙ্গল হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক মো. মুছা জানালেন, মৌলভীবাজারে সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় দেড়শ হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে, সবচেয়ে বেশি শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। এর ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল কয়েক লাখ মানুষ। তারা এখন বেকার, দিন কাটাচ্ছেন অর্থকষ্টে।

একই কথা বললেন বেকার হয়ে পড়া মানুষগুলো। হোটেল-রিসোর্টের মালিকরাও বলছেন, তাদের পক্ষে কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ আনুষাঙ্গিক খরচ মিটিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল ট্যুর গাইড লিটন দেব সারাবাংলাকে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় ৭০ জনের মতো ট্যুর গাইড রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৬০ জন শুধু এ কাজই করেন। কাজ হারিয়ে গত চার মাস তারা খুবই কষ্টে আছেন। সরকারিভাবে ট্যুর গাইডদের জন্য আলাদা কোনো সহায়তা মেলেনি। জেলায় নামিদামি হোটেলসহ বেশ কয়েকটি বড় হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ ও গেস্ট হাউস রয়েছে। এগুলোতেও অনেকেই কাজ করেন। তারা সবাই কাজ হারিয়ে এখন বেকার দিন কাটাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

শ্রীমঙ্গল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের এজিএম আরমান খান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০০ লোক কাজ করে। এখন প্রতিষ্ঠানের আয় শূন্যের কোটায়। তারপরও আমরা প্রত্যেকের বেতন-ভাতা অব্যাহত রেখেছি। এই সংকটে গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের ক্ষতি কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী সজল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসায় নেমে এখন আমরা দিশাহারা। রিসোর্ট বন্ধ থাকলেও কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংক ঋণের কিস্তি আমাদের ঠিকই সময়মতো পরিশোধ করতে হচ্ছে। সরকারের প্রণোদনা না পেলে অনেক মালিককে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হবে— এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলতে পারি।

মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গল উপজেলার সম্পাদক শাজাহান মিয়া বলেন, উপজেলায় ১ হাজার ৩৭০ নিবন্ধিত শ্রমিক আছেন। তাদের মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ জন কার, মাইক্রোবাস, জিপ বা অন্য বাহনের চালক পর্যটন খাতে নিয়োজিত ছিলেন। করোনাভাইরাসের কারণে এতদিন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এখন বিধিনিষেধ শিথিল হলেও পর্যটক না আসায় তাদের অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।

তবে জেলা প্রশাসন বলছে, করোনার এই সংকটকালে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট অনেককেই সহায়তা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান সারাবাংলাকে বলেন, এটি একটি পর্যটন সমৃদ্ধ জেলা। এই জেলার পর্যটন খাতে পর্যটননির্ভর লোকের সংখ্যা অনেক। পরিস্থিতি বিবেচনায় ছোট ব্যবসায়ীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আর লকডাউনের কারণে ক্ষতির মুখে পড়া পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সহায়তার বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন দফতরে অবহিত করা হবে।

করোনা গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট পর্যটন খাত মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর