বনানী কবরস্থানে সমাহিত শাহজাহান সিরাজ
১৬ জুলাই ২০২০ ০০:৩৩
ঢাকা: বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক, সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজকে। বুধবার (১৫ জুলাই) রাত পৌনে ১০টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদে তার তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এ সময় তিনি বলেন, ‘ওই সময় (স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে) দু’জন তরুণ— একজন আ স ম আবদুর রব, আরেকজন শাজাহান সিরাজ দেশের স্বাধীনতার ঝাণ্ডা তুলে ধরেছিলেন। শাহজাহানা সিরাজের মৃত্যুতে ইতিহাসের আরেকটি পাতা ঝরে পড়ল। জাতির দুর্ভাগ্য নতুন প্রজন্মকে এসব ইতিহাস জানানো হয় না। আমি এ জন্যেই তাকে সালাম জানাতে এসেছি।’
শাহজাহান সিরাজের তৃতীয় জানাজায় অংশ নেন বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, তাবিথ আউয়াল, আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেসউইং সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহজাহান সিরাজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
শাহজাহান সিরাজ ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে আব্দুল গণি মিয়া ও রহিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে শাহজাহান সিরাজ ছাত্র-রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সেই সময় তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দাত কলেজের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র-রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়াদে তিনি করটিয়া সা’দাত কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।
একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। এরপর তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’র (যার অন্য নাম নিউক্লিয়াস) সক্রিয় কর্মী, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।
শাহজাহান সিরাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো শাহজাহান সিরাজ ছিলেন তাদেরই একজন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব প্রমুখ ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন শাহজাহান সিরাজ।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন আ স ম আবদুর রব। সেখান থেকেই পরেরদিন স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পরিকল্পনা করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বিশাল এক ছাত্রসমাবেশে বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন শাহজাহান সিরাজ। এরপর যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’ (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর শাহজাহান সিরাজ সর্বদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন, যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হন শাহজাহান সিরাজ। পরে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। জাসদের মনোনয়নে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে তিনবার জাতীয় সংসদের সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।