Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলকে জাতীয় পর্যায়ে বিরাট পরিচিতি দিয়েছেন’


১৬ জুলাই ২০২০ ০১:১৮

ঢাকা: কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলকে জাতীয় পর্যায়ে একটা বিরাট পরিচিতি দিয়ে গেছেন। তিনি অসুস্থ শরীর নিয়েই সারাদেশে ১৪ দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন, দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। তার সব সময় শেখ হাসিনার প্রতি একটা অসম্ভব অন্ধভক্তি, শ্রদ্ধা এবং সম্মান ছিল।’

বুধবার (১৫ জুলাই) কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সাবেক মুখপাত্র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম এমপি’র স্মরণে অনুষ্ঠিত এক শোকসভায় তিনি এসব কথা বলেন ।

বিজ্ঞাপন

আমির হোসেন আমু রাজনৈতিক সহযোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি একটা কথা বলতে চাই, মাননীয় সভাপতি শেখ হাসিনা মোহাম্মদ নাসিম সম্পর্কে যে কথাটি বলেছেন ‘আমি একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম’ এই কথাটির উক্তির মধ্য দিয়েই কিন্তু নাসিমের সার্বিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বলে আমি মনে করি।’

‘তার কারণ শেখ হাসিনা যে যুদ্ধে অবতীর্ণ, যে যুদ্ধ তিনি করে আসছেন অসম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, এই দেশকে জঙ্গিমুক্ত করার জন্য যে যুদ্ধ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে যুদ্ধ জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে; সেই সহযোদ্ধা হিসেবে যাকে অভিহিত করেছেন সুতরাং সেই যুদ্ধের সহযোদ্ধাকে এমনই হতে হবে এবং তেমনিই ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম।’ যোগ করেন তিনি।

মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্মৃতিচারণ করেন এই প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তার পিতা যেমনিভাবে অবিচল ছিলেন, একনিষ্ঠ ছিলেন, মোহাম্মদ নাসিমও কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একইভাবে অবিচল এবং একনিষ্ঠ ছিলেন। অনেকে অনেক সময় তাকে খোঁচা মেরে কথা বলেছে, মন্ত্রীত্বের ব্যাপারে কথা বলেছে, এমপির ব্যাপারে কথা বলেছে, আপনাকে এটা দেয়া হয় নাই; আপনি এটার প্রাপ্য ছিলেন। উত্তরে সে একটি মাত্রই কথা বলেছেন, তারপরও আমি যা পেয়েছি আমার এই বয়সে অন্য কেউ এটা পায়নি, পেত না; যেটা শেখ হাসিনা আমাকে দিয়েছেন। সব সময় শেখ হাসিনার প্রতি তার একটা অসম্ভব অন্ধভক্তি, শ্রদ্ধা এবং সম্মান ছিল।’

১৪ দলের সমন্বয়ক আমু আরও বলেন, ‘একটি কথা আমি এখানে স্মরণ করতে চাই, অনেকে ১৪ দল সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন কিন্তু আমার যেটা মনে পড়ে এরশাদ আমলে সেদিনকার যে শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলো জয়নাল জাফরদের গুলি করে হত্যা করা হলো সেদিন শেখ হাসিনা তার কিছুদিন পূর্বেই দেশে ফিরেছিলেন। সেদিন তার সাথে আমরা ছুটে গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাজেয় বাংলাদেশের পাদদেশে বসে সেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। ওখানে সেই সিদ্ধান্ত হলো আমাদের ঐক্য দরকার এবং তার পরেই কিন্তু ১৫ দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়েছিল। সেই ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের ধারাবাহিকতায় কিন্তু আমরা চলছি যদিও এর আগেও আমরা নেত্রী আসার আগে জিয়াউর রহমানের আমলে নয় দলীয় জোট, অনেক সময় অনেক জোট করেছি এই শক্তি নিয়ে, এই রাজনৈতিক দলগুলো নিয়েই এবং আন্দোলন করেছি। শেখ হাসিনা ১৫ দলীয় জোট করেন।’

সেই ধারাবাহিকতায় এখন আবার ১৪ দলীয় জোট আছে।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের সময় শেখ হাসিনাসহ একসঙ্গে ৪২ জন নেতা গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সেদিন শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনকে একসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল। চোখ বেঁধে সেদিন আমাদেরকে ক্যান্টনমেন্টে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যাই হোক আজকে আমি যেটা বলতে চাই মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলকে জাতীয় পর্যায়ে একটা বিরাট পরিচিতি দিয়ে গেছেন।’

‘তোফায়েল সাহেব বলেছেন তিনি (নাসিম) অসুস্থ ছিলেন। স্ট্রোক করেছিল ওয়ান-ইলেভেনের সময়। এই অবস্থা নিয়েও কিন্তু সারাদেশে ১৪ দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। ১৪ দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন এই অসুস্থ শরীর দিয়েই। এমনিভাবে তিনি কাজ করেছেন। আপনারা সবাই তার যে প্রশংসা করেছেন এবং তাতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।’ যোগ করেন আমু।

করোনার এই কঠিন সময়ে আওয়ামীলীগ যে নেতাদের হারাচ্ছেন তা পূরণ হবার নয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন অবস্থায় আওয়ামীলীগ যে মানুষগুলিকে হারাচ্ছে এমনিভাবে হারানো আর কোন দল কোনদিন চিন্তা করতে পারেনি। তার কারণ তারা তো কাজে নেই তারা তো করোনা থেকে অনেক দূরে। আজকে আওয়ামীলীগই যা হারাবার হারাচ্ছে।’

আমির হোসেন আমু বলেন, ‘যদি করোনা পরিস্থিতি না হতো তাহলে তার জানাজাকে কেন্দ্র করে যে মানুষের ঢল নামত তাতে প্রমাণিত হত; একজন সংগ্রামী মানুষের জীবনকে মানুষ কিভাবে মূল্যায়ন করে। আমাদের দুর্ভাগ্য সেটা আমরা দেখাতে পারেনি। শোকসভাও ঠিক তেমনি ভাবে করতে পারেনি। ভবিষ্যতে আমরা চেষ্টা করব যাতে করে সঠিক মূল্যায়ন হয় এবং ১৪ দল যেভাবে ছিল সেভাবে আরো তৎপরতা চালাবে।’

করোনার সময়ে মোহাম্মদ নাসিমসহ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরান দলীয় নেতাকর্মী যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয় দলীয় স্মরণ সভায়।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নাসিমের অকাল মৃত্যু আমাদের কাঁদিয়েছে। তিনি আমাদের খুব প্রিয় একজন সহকর্মী ছিলেন। একটা বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন নাসিম। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে আন্দোলন করেছি। মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলকে এতো বেশি পছন্দ করতেন যে প্রায় দিনই এই ১৪দল নিয়ে আলোচনা করতেন। নাসিম চলে গেছে আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। আমাদের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী নাসিমের অনুভব করেন।’

সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারলেই মোহাম্মদ নাসিমের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানো হবে।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘যখনই দেশে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তখনই রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণের জন্য একটা প্রচেষ্টা সব সময় হয়ে থাকে। যখন আমরা সামনে এগিয়ে আসছি তখন এই শত্রুগুলো একইভাবে কার্যকর রয়েছে। মোহাম্মদ নাসিম এমন পরিস্থিতিতে শক্তভাবে মোকাবেলা করতে পারতেন। মোহাম্মদ নাসিম তার নেত্রীর প্রতি অকৃত্রিম আস্থা এবং বিশ্বাসী ছিলেন। আমাদের সংগ্রামের বিশ্বস্ত সাথিকে হারালাম। তিনি কখনো অসম্প্রদায়িক সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গিকার থেকে বিচ্যুত হন নাই।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রাম, আগুণ সন্ত্রাস বিরোধী সংগ্রাম সবকিছুতে সাহসের সাথে রাজপথে নির্বিক সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছেন মোহাম্মদ নাসিম। এই করোনাকালে রাষ্ট্রের দুর্বলতা ও কাটতিগুলো মোকাবেলা করার দাবি সামনে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলোকে বাস্তবায়নে প্রশাসনের এবং সরকারের কতিপয় লোকের দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতা এবং উদ্দেশ্যমূলক চক্রান্ত করোনা যুদ্ধে ক্ষতি করছে। এর জন্য সংস্কার দরকার। করোনাকালে জঙ্গি সন্ত্রাসী শক্তি আড়ালে চলে গেছে আমার কাছে তা মনে হচ্ছে না। তাদের অপৎপরতা মোকাবেলা করা ও নসাৎ করার জন্য প্রগতিশীল শক্তিকে ধরে রেখে সচল করা দরকার।’

তিনি বলেন, দুর্নীতি পুষে রেখে অর্থনীতি উদ্ধার করা যাবে না। করোনা পুষে রেখে অর্থনীতি সচল করা যাবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘একজন প্রাণবন্ত মানুষকে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম বলতে হবে এটা স্বপ্নেও ভাবি নাই। মোহাম্মদ নাসিমকে হারিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেললো অসম্প্রদায়িক আপাদমস্তক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক একজন নায়ককে। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম আন্দোলনে ১৪ দলকে যেভাবে সংগঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার তুলনা নেই।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘তার অবর্তমানে ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি হয়েছে এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়। জাতীয় নেতৃবৃন্দরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সকলে প্রচেষ্টা চালালে যে কোনো অপশক্তিকে আমরা মোকাবেলা করতে পারব। গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিররলস পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সন্মানিত দেশ হিসাবে সন্মানিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে চলছেন এই চলার পথে বিনা বাধায় যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রেীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু। ১৪ দলীয় নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, মোজাফফর হোসেন পল্টু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদারসহ অনেকে। ভার্চুয়াল স্মরণসভাটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।

১৪ দল আওয়ামী লীগ আমির হোসেন আমু মোহাম্মদ নাসিম শোক স্মরণসভা

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর