জনশুমারিতে করোনার বাধা: তবু চলবে প্রবাসী ও বিদেশির গণনা
১৬ জুলাই ২০২০ ০৮:২৯
ঢাকা: ২০২১ সালে শুরু হতে যাওয়া জনশুমারিতে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের গণনার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে সরকার। আগামী বছরের শুরু থেকে এই শুমারি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি চলছিল এ বছর থেকেই। তবে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ধাক্কায় সেসব প্রস্তুতি পড়েছিল সংশয়ের মুখে। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশি ও দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের জনশুমারির আওতায় আনা যাবে কি না, তা নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। তবে এখন পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটি বলছে, একটু দেরি হয়ে গেলেও পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলবে কাজ।
বিবিএস বলছে, জনশুমারির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অভীষ্টের ১৬টি সূচকের তথ্য সরাসরি এবং ৯৭টি সূচকের ডিনোমিনেটর পাওয়া যাবে। তাছাড়া শুমারি পর্যন্ত আর্থসামাজিক ও জনতাত্ত্বিক জরিপের মাধ্যমে বিশদ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। শুমারিতে প্রথমবারের মতো মাল্টিমোড (মোবাইল অ্যাপ, ওয়েব অ্যাপ, পিক অ্যান্ড ড্রপ, পেপার বেইজড, কল সেন্টার ইত্যাদি) পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এর মাধ্যমে দেশে সীমিত আকারে ই-সেন্সাস পরিচালনা করা হবে। এ শুমারিতে প্রথমবারের মতো বিদেশে অবস্থানরত প্রায় এক কোটির মতো প্রবাসীদের গণনার আওতায় আনা হবে। এছাড়া বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থানকারী বিদেশিদেরও গণনা করা হবে।
জনশুমারি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. জাহিদুল হক সরদার সারাবাংলাকে বলেন, আমরা প্রবাসী ও দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের গণনার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। করোনার কারণে এ কার্যক্রম কিছুটা স্থবিরতা আসলেও আশা করা হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তাছাড়া মূল গণণা কার্যক্রম এখনো কয়েক মাস বাকি রয়েছে। তাই আমরা প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছি। তাছাড়া এটি প্রথম উদ্যোগ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।
তিনি জানান, ১৯৭৪ সালে দেশে প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয় আদমশুমারি। ২০২১ সালের শুমারিটি দেশের ষষ্ঠ শুমারি। তবে ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান আইন অনুযায়ী আদমশুমারির বদলে এর নাম হয়েছে জনশুমারি ও গৃহগণনা।
বিবিএস সূত্র জানায়, জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে চলতি বছরের শুরুতেই। তবে করোনার কারণে অনেক রুটিন কার্যক্রমই স্থবির হয়ে পড়ে। তারপরও ২০২১ সালের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি সারাদেশের সব মানুষকে গণনা করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। জানা গেছে, এবারই প্রথম শুমারি শুরুর আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জাহিদুল হক সরদার বলেন, শুমারিটি সফল করতে গত এপ্রিল মাসে হউজহোল্ড লিস্টিং অপারেশন করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেই কাজটি স্থগিত রয়েছে। আগামী ১৫ আগস্টের পর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে লিস্টিং অপারেশনটি পরিচালনার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে লিস্টিং অপারেশন থমকে গেলেও শুমারির আরও বেশকিছু কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— জিও কোড আপডেটিং ও এরিয়া আইডেন্টিটি ম্যাপিং। এছাড়া হাউজহোল্ড লিস্টিং অপারেশনের জন্য প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার তালিকাকারী ও সুপারভাইজার বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া শুমারির গণনার জন্য এই দেড় লাখসহ প্রায় পাঁচ লাখ গণণাকারী বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
জাহিদুল বলেন, মাঠের কাজ কিছুটা স্থবির থাকলেও অফিসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। শুমারির প্রস্তুতি অব্যাহত আছে। প্রবাসী ও দেশে অবস্থানরত বিদেশিদেও প্রাথমিক তথ্য তাদের পরিবার থেকেই সংগ্রহ করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এর আগে বলেছিলেন, শুমারি পরিচালনা করতে গিয়ে কোনো জায়গায় যেন কোনো বাড়তি খরচ না হয়। এক টাকা দিয়ে পারলে দুই টাকা খরচ করবেন না। পাশাপাশি সময়মতো যেন নির্ভুল কাজ করা যায়, সেদিকে নজর রাখবেন। মনে রাখবেন এর সঙ্গে সরকারের সুনাম জড়িত। আমরা চাই কতজন মানুষ দেশে আছে তার সঠিক তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরতে। তাই কম হোক বা বেশি হোক— সেটা বড় কথা নয়, আগের চাইতে আরও নিখুঁত তথ্য তুলে ধরতে হবে। এবারের জনশুমারি যেন সবচেয়ে ভালো হয়, সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।