বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার: মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা
১৬ জুলাই ২০২০ ১৪:২৬
১৬ জুলাই ২০০৭, সোমবার, ভোর ৬টায় শ্রাবণের প্রবল বর্ষণের মধ্যে সুধাসদনে প্রবেশ করে যৌথবাহিনী। সকাল ৭টা ৩২ মিনিটে যৌথবাহিনীর সদস্যরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে সুধাসদন থেকে। সুধাসদনের চতুর্দিক বিভিন্ন বাহিনীর দুই সহস্রাধিক সদস্য ঘিরে রাখে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা এর মধ্যে ফজরের নামাজ আদায় করেন; সাদা শাড়ি পরিহিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা যৌথবাহিনীর কাছে জানতে চান, কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দেশে কি সামরিক শাসন জারি হয়েছে। তেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা। বরং যুদ্ধংদেহী মনোভাবে সাজসাজ রব তুলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে গাড়ির বহর হাজির হয় ঢাকার সিএমএম আদালতে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার প্রচলিত নিয়মের তোয়াক্কা না করে আদালত বসার ঘণ্টা দুয়েক বাকি থাকতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জামিন নামঞ্জুর করে সংসদ ভবনের সাব-জেলে প্রেরণ করে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে।
সিএমএম কোর্টে দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা সরকারের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আইনি ভাষায় ৩৬ মিনিট বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার আগে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি রেখে যান। ১০-১২ ঘণ্টার মধ্যে সমগ্র দেশ-দেশবাসী তা অবগত হয়ে যান।
প্রিয় দেশবাসী,
আমার সালাম নেবেন। আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনও অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও আপনারা দেশবাসীর ওপর আমার ভরসা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সঙ্গে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই।
দুই
২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ছিল তা দেশবাসী সকলেই জানেন। সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে শিহরে উঠতে হয়। সে সময়টা হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক দুর্নীতি দুঃশাসনের কাল ছিল। সমগ্র জনপদ স্বজন হারানোর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে থাকতো। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রগতিশীল দলের নেতা-কর্মী সমর্থক কেউই জামাত বিএনপি সরকারের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে লঙ্গরখানা খুলতে হয়েছিল। এমনকি আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই (সেন্ট্রাল ফর রিসারস্ এন্ড ইনফরমেশন) লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। ওই সময়কালে আওয়ামী লীগের ২২ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাসহ গোটা আওয়ামী লীগ পরিবারকে গ্রেনেড হামলা করে ধ্বংস করার চক্রান্ত হয়েছিল। আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল, অন্তত ৫০০ জন নেতা-কর্মী সারা জীবনের জন্যে পঙ্গুত্বের জীবন বহন করতে হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হচ্ছে ইয়াজউদ্দিন, মঈনউদ্দিন, ফকরুদ্দিন সরকার পূর্ববর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার না করে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অদ্ভুত অদ্ভুত সব মামলা দেওয়া হয়েছিল। স্পষ্টতই বোঝা গিয়েছিল ওঠা ছিল মাইনাস টু নয়; মাইনাস ওয়ান প্রকল্প।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওই জোট সরকারের আমলেই মোট নয়টি দুর্নীতির মামলা করা হয়েছিল। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে আরও ছয়টি দুর্নীতি বা চাঁদাবাজির মামলা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। সব কৃষি উপকরণ দ্রুত কৃষকদের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। সারসহ সব উপকরণ কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়। কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। কৃষি কারিগরি শূন্যপদে লোক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় তিন কোটি টনে পৌঁছায়। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।
শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি। মাত্র পাঁচ বছর সরকার পরিচালনা শেষে খাদ্য উদ্ধৃত দাঁড়ায় ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এলে কৃষি উৎপাদনে স্থবিরতা নেমে আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কৃষি উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতা, অনিয়ম, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আবার খাদ্যঘাটতির দেশে পরিণত হয়। সারের জন্য বিএনপি সরকার ১৯৯৫ সালে ১৮জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। ২০০৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত ২৪ কৃষককে গুলি করে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাজানো দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। এতে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঢাকা শহরে ২৫ লক্ষ মানুষ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবীতে আন্দোলনে স্বাক্ষর করেন। যুব মহিলা লীগও এক লক্ষ নারীর স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন সরকার বরাবর জমা দেন। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রোদ্রোহীতার মামলা দেওয় হয়।
আমরা জানি, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে মামলা সাজানো হয়েছিল তা থেকেই বোঝা গিয়েছিল সেই সরকারের মতলব কী ছিল। কথিত চাঁদাদাতা বলেছিল, সে তিন কোটি টাকা একটি কালো সুটকেসে ভরে নিয়ে গণভবনে গিয়েছিল। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জন্য এটিও একটি আকর্ষণীয় ক্লু হতে পারতো। কারণ এত বড় সাইজের সুটকেস পাওয়া যায় না। তাহলে তাজুল ফারুক নিশ্চয় অর্ডার দিয়ে বড় সাইজের একটি বানিয়েছিলেন। সে ব্যাগটি কোথা থেকে বানানো হয়েছিল তা সরকারি গোয়েন্দারা তদন্ত করে দেখতে পারতো। সাধারণত একটি সুটকেস লম্বায় দেড় ফুট, উচ্চতায় ১৪ ইঞ্চি এবং চওড়ায় দেড় ফুট হয়ে থাকে। এ হিসাব অনুযায়ী একটি সুটকেসে ৫০০ টাকার নোটের সর্বোচ্চ ৩০০ বান্ডিল রাখা সম্ভব। অর্থাৎ একটি সুটকেসে দেড় কোটি টাকা রাখা সম্ভব।
সেসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে ধরনের সুটকেস ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাতে একটি সুটকেসে ৫০০ টাকার ৬০০ বান্ডিল বহন করা সম্ভব নয়। ৬০০ বান্ডিল বহনের জন্য আলাদাভাবে অর্ডার দিয়ে নতুন সুটকেস বানাতে হবে। গেট থেকে গণভবনে শেখ হাসিনার অফিস কক্ষের দূরত্ব ছিল প্রায় ৫০০ গজ। নিরাপত্তাজনিত কারণে এসএসএফ প্রধানমন্ত্রীর মোটর শোভাযাত্রার নির্ধারিত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও গাড়ি গণভবনের অফিসকাম বাসভবনের গেট পর্যন্ত যাবার অনুমতি দিত না। অতিথিদের গাড়ি গণভবনের মূল গেটের পাশেই রাখার ব্যবস্থা ছিল। তাই এত ভারী একটি সুটকেস কীভাবে একজন গেট থেকে বহন করে অফিস রুম পর্যন্ত নিয়ে গেলেন তা নিয়েও সাধারণ নাগরিকরা প্রশ্ন করেছিলেন।
পাঁচশত টাকার নোটের ১০০টির একটি বান্ডিলে হয় ৫০ হাজার টাকা। বাজারে পাঁচশত টাকার দু’ধরনের নোট আছে। ছোট আকারের নোট হলে এক বান্ডিলের ওজন ৯৫ গ্রাম ও বড় আকারের হলে এক বান্ডিলের ওজন ১১৫ গ্রাম বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। সে হিসাবে তিন কোটি টাকার জন্য মোট ৬০০ বান্ডিল পাঁচশত টাকার নোট লাগবে, যার ওজন দাঁড়ায় ৫৭ বা ৬৯ কেজি। আর এগুলো বহনের জন্য লাগবে একটি বিশাল সুটকেস। বাজারে এখন বড় সাইজের যেসব সুটকেস বিক্রি হয় তার কোনটিতেই ৫৭ কেজি মাল বহন করা সম্ভব নয়।
তিন
মূলত বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে প্রকৃত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জোরালো নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তার অবদানে স্বীকৃতি হিসেবে ফিলিপাইনের ‘হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ’ তাদের ৪৫৩ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৎকালীন বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতাকে ‘কংগ্রেশনাল মেডেল অব অ্যাচিভমেন্ট’ প্রদানের প্রস্তাব গ্রহণ করে। ২০০৫ সালের ৬ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে উল্লিখিত পুরষ্কার প্রদান করা হয়। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব এশিয়ান পার্লামেন্টস্ ফর পিস্’’-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এশিয়াকে একত্রিত করা, গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য তাকে উল্লিখিত পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।
পাঠকের মনে থাকার কথা, ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্য ৩০ দফা দাবিনামা উত্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা পূর্বে প্রদত্ত ৩০ দফা আরও পরিশীলিত করে ২৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। দেশে তখন ১ কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটার ছিল। সে সময়কার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনআন্দোলনের কথা জনগণের স্মরণে থাকার কথা।
১৯৯৮ সালে দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো সেই বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করেছিল। বিবিসির মতো সংবাদ মাধ্যমগুলো অন্তত ১০ লাখ লোক মারা যাবে বলে আশঙ্কা করেছিল। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমানুষিক পরিশ্রম করেছিলেন। বন্যার পর ক্ষুদে কৃষক, বর্গাচাষি, ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য নয়া নীতিমালা তৈরি, আদেশ প্রদান, ব্যাংকের শাখায় কারা ঋণ পাচ্ছে তার তালিকা করা- এতসব যুগান্তকারী কাজকর্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছিল। এগুলোকে আমরা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত না বলে আর কী বলব। তার কর্মনিষ্ঠার কারণে তখন একজন মানুষও না খেয়ে মরেনি। আশ্চর্যজনকভাবে বন্যার পরের বছর বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বেড়ে ছিল।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর মানুষের ওপর ঋণের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। ধনী আরও ধনী হয়েছে, গরিব আরও গরিব হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশে আসার পর থেকে সব সময় চেষ্টা করেছেন কীভাবে মানুষের কষ্ট লাঘব করা যায়। সেটা তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হোক কিংবা ক্ষমতার বাইরে থেকে হোক। দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সব সময় তার চেষ্টা ছিল কীভাবে দেশের জনগণের ঋণের বোঝা কমানো যায়। ১৯৯৭ সালে মাইক্রোক্রেডিট সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হোয়াইট হাউসের ওই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ ওই সময় পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছিল তা যেন মওকুফ করে দেন। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন মোট ঋণের একাংশ মওকুফ করে দেন। সেই মওকুফ করা অর্থ বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণসহ বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
আবার খেয়াল করলে দেখা যাবে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে অসাধারণ বিষয় সংযুক্ত হয়েছিল। অনুচ্ছেদ ১৮ (ক): পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন। রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব বৈচিত্র্য, জলাভূমি বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।”
অতএব, স্পষ্টতই শেখ হাসিনা শুধু বর্তমান সময়ের জন্য ভাবেন না; একশো বছর পরের পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা করেন। তার ২১০০ সালের বদ্বীপ পরিকল্পনা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, জাতির ক্রাইসিসের সময় শেখ হাসিনাকে ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায় না।
আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ১৯৯৩ সালে এক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন এভাবে, ‘‘সপ্তাহ দুই ঢাকাতেই ছিলাম। দেখা হতেই শওকত ভাই (শওকত ওসমান) আমার হাত ধরে বলেছিলেন, গাফ্ফার, দোহাই তোমার, হাসিনার সমালোচনা করো না। দীর্ঘকাল ধরেই তো চারিদিকে তাকিয়ে দেখছি, এত জ্ঞানী-গুণী, ডান বামের বড় বড় নেতা। মুখে হাসিনার এত নিন্দা সমালোচনা। কিন্তু ক্রাইসিসের সময় হাসিনা ছাড়া কাউকে দেখি না।’’
একবার বিখ্যাত পত্রিকা ‘গার্ডিয়ান’ এর সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আই ডু পলিটিক্স ফর দা পিপল’ (আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি)। অনেকেরই মনে থাকার কথা, সেই সময়টাতে ‘মাইনাস টু’ বিষযটা বহুল প্রচলিত বিষয় হয়ে গিয়েছিল। অনেক বিদগ্ধজনেরাও বলতেন, ‘মাইনাস টু থিওরি’; কিন্তু এটা আসলে ছিল ‘মাইনাস ওয়ান থিওরি’।
শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয় ১৬ জুলাই আর খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৫৯ দিন পর ৩ সেপ্টেম্বর। অথচ সে সময়কার সরকারের পূর্ববর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
লেখক: সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক