সাহেদ-সাবরিনার উত্থান সরকারের নীতির কারণে— রিজভী
১৬ জুলাই ২০২০ ১৫:৩১
ঢাকা: ‘প্রতারক’ মো. সাহেদ করিম এবং ডা. সাবরিনার উত্থান সরকারের নীতির কারণেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘মানুষ মরে মরুক, আমি (সরকার) তো ঠিক আছি, জনগণ চুলায় যাক, আমি তো ঠিক আছি— এটা হচ্ছে এই সরকারের নীতি। এই নীতি কারণেই আজকে সাহেদের উত্থান হয়েছে, সাবরিনাদের উত্থান হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এই মন্তব্য করেন। কোভিড-১৯ পরীক্ষা না করেই ভুয়া সনদ প্রদান ও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালে পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এ মানববন্ধন আয়োজন করে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একজন পাপুল ধরা পড়ল। এরকম গত ১২ বছরে কত পাপুল তৈরি হয়েছে এটা আমরা বলতে পারব না। এই দুরাচার দুর্বৃত্তমূলক শাসনব্যবস্থায় পাপুলরাই প্রতিষ্ঠিত হবে, তারাই এমপি হবে, তাদের পক্ষেই রাষ্ট্র থাকবে। এই নীতিতে আজকে রাষ্ট্র চলছে বলেই মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এক ভয়ংকর মরণঘাতি বেষ্টনীর মধ্যে দেশের মানুষ এখন বন্দি হয়ে আছে।’
রিজভী বলেন, ‘আজকে হাসপাতালে আইসিইউ নেই, বেড নেই, ভেন্টিলেটর নেই, হাসপাতালে মাস্ক নেই। আর নকল মাস্ক নিয়ে এসছে তার সঙ্গে কে জড়িত? মন্ত্রীর ছেলে। ভেন্টিলেটর এখন এই মুহূর্তে জীবন বাঁচানোর একটি অন্যতম সরঞ্জাম। সেটি আমদানি করছে একে তো আওয়ামী সিন্ডিকেট, তার ওপর মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনেরা। তাহলে কী করে মানুষ বাঁচবে? মানুষ বাঁচানোর কোনো জায়গা তারা (সরকার) রাখবে না।’
তিনি বলেন, ‘আক্রান্ত রোগী রাস্তায় মরছে, অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে মরছে। সরকারি হাসপাতালগুলো নরকে পরিণত হয়েছে। আজকে মানুষকে বাঁচা-মরার সার্টিফিকেট দিচ্ছে একজন প্রতারক। যার করোনা হয়েছে তাকে করোনা হয়নি বলে সনদ দিচ্ছে। আর যার করোনা হয়েছে তাকে বলছে যে তার করোনা হয়নি। আজকে দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গেছে? আজকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় আমাদের বিমান। শুধু ইতালিতে নয়, আরও অন্যান্য দেশ থেকে আমাদের বিমান ফিরিয়ে দিচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘আজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দাবি করছেন টিউশন ফি কমানোর জন্য। প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো অনেক প্রণোদনা দিলেন অনেককে। কিন্তু এটা কি খুব অন্যায় দাবি? শুধু ইংরেজি স্কুল নয়, আজকে দেশের সব স্কুল-মাদরাসায় টিউশন ফি একেবারে বাতিল করে দিতে পারেন। এটাই ছিলো সবচাইতে মানবিক কাজ এই মুহূর্তে। একে তো ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, তার ওপরে তাদের টিউশন ফি দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যদি বলা হতো মেগা প্রজেক্ট খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে, মেগা প্রজেক্ট বাড়ান। সঙ্গে সঙ্গে দেখতেন যে আরও অনেক টাকা যোগ হয়ে যেত। এমনি তো প্রথম একটি প্রজেক্টের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়, সেটি ১০ গুণ-১৫ গুণ বৃদ্ধি হতে থাকে বছরের পর বছর বাড়তে বাড়তে। এই টাকা যায় ক্ষমতাসীনদের পকেটে। সেই কারণে তাদের ইন্টারেস্ট মেগা প্রজেক্টে, স্কুল-কলেজ-হাসপাতালের দিতে তাদের মনোযোগ নেই।’
রিজভী বলেন, ‘প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য বিএনপির তরুণদেরকে রাতের অন্ধকার তুলে নিয়ে গুম করা হয়, স্বীকার করা হয় না। সবাই দেখেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে লোকজন টিটো হায়দারকে তুলে নিয়ে গেছে। পলিরা আজ রাত্রের অন্ধকারে গ্রেফতার হয়ে যায়। এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে করোনার মধ্যে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছি, আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি, আমরা পিপিই দিচ্ছি— এটা সহ্য হচ্ছে না। এটা সহ্য না হওয়ার কারণে এখন শুরু হয়েছে মিথ্যা মামলা, গুমের ধারাবাহিক বিএনপি নিধনে যে কর্মসূচি, সেই কর্মসূচি তারা অব্যাহত রেখেছে। কোনোভাবে তারা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা সহ্য করবে না। আজকে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের কালো দড়ির ফাঁসি মাথার উপর লটকিয়ে রেখেছে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘আজ বাড়িতে বাড়িতে ছেয়ে গেছে করোনা আক্রান্ত রোগীতে। প্রতিদিন দুপুরবেলা জনৈক নাসিমা সুলতানা নামে একজন মহিলাকে দিয়ে প্রেস ব্রিফিং দেওয়ানো হয়। সেখানে বলা হয় আক্রান্তের সংখ্যা এত, আর মৃত্যুর সংখ্যা এত। মানুষ তার প্রেস ব্রিফিং দেওয়ার আগে বলে দেয় আজকে আক্রান্তের সংখ্যা এত বলা হবে, আর মৃত্যুর সংখ্যা এত বলা হবে। তোঁতা পাখির মতো উনি (নাসিমা সুলতানা) পড়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারকে বলে যাই, অন্ধ হলেই কিন্তু প্রলয় বন্ধ হয় না। যা ঘটছে তা কিন্তু আমরা সবই জানি। বাস্তব সত্য বাংলাদেশে বহু মানুষ করোনায় জীবন দিয়েছেন। এর দায়-দায়িত্ব কার? যখন করোনা মহামারি শুরু হয়, তখন উচিত ছিল সারা বাংলাদেশে লকডাউন দেওয়া, এয়ারপোর্টসহ বাংলাদেশ প্রবেশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া। আমরা কী দেখলাম? এই ক্ষমতাসীন সরকার আতশবাজি পোড়ানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। তাদের (সরকার) ভুলের কারণে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে এসে বাসা বাঁধলো, তারপর সবাইকে আক্রান্ত করলো। আমরা কী করোনা আক্রান্তের মৃত্যুগুলোকে মৃত্যু বলব, নাকি হত্যা বলব?’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে মহানগর, যুব দল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এতে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর দুই শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি প্রেস ক্লাবে কর্মসূচি বিএনপি রুহুল কবির রিজভী হাবিব-উন-নবী খান সোহেল