Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদের আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চায় গণসংহতি আন্দোলন


১৬ জুলাই ২০২০ ১৭:৫৯

ঢাকা: লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ‘রিজেন্ট-জেকেজি’-কে কোভিড-১৯ টেস্টের অনুমোদন ও স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগে ঈদের আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পদত্যাগ চেয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। অন্যথায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না দলটি। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে পদত্যাগে বাধ্য করবে তারা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে দলটি শীর্ষ নেতা এবং সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব কথা বলেন। রিজেন্ট-জেকেজি হাসপাতালের প্রতারণা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতির প্রতিবাদে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাইফুল হক, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ।

মাহমুদুর রহমান মান্নান বলেন, ‘একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা এখন। গতকাল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেছেন, দিনে দিনে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। ভালো অবস্থা কবে হবে, সেটার ভবিবষ্যৎ আমি দেখতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘এই মহাপরিচালক করোনার শুরুতে বলেছিলেন, যেহেতু ভ্যাকসিন নাই, পরীক্ষা করেন, পরীক্ষা করেন, পরীক্ষা করেন। আক্রান্ত লোকগুলোকে আলাদা করেন, সুস্থ লোকগুলোকে আলাদা রাখুন। আর আমাদের এই সরকার ইতোমধ্যে পরীক্ষা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ১৮ হাজার পর্যন্ত পরীক্ষা করেছিলাম, এখন ১৩ হাজার করছি। প্রশ্ন তো করাই যেতে পারে, সরকার পরীক্ষা কমিয়ে দিল কেন? চারদিন আগে পত্রিকায় বলা হয়েছে কিট নাই। কারণ, কিটের ব্যবসা যারা করেছেন, তারা এখন আগ্রহী না।’

‘অথচ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে কিট বানালেন, টালটি-বালটি করে এখন পর্যন্ত সেটা গ্রহণ করা হয়নি’— বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বলা হচ্ছে হাসপাতালে এতগুলো বেড খালি, আইসিইউ খালি। মানে লোকজনের আর অসুখ-বিসুখ হচ্ছে না— ভাবটা তাই মনে হচ্ছে। এমন একটা সরকার। যারা নিদ্বিধায়, অনর্গল মিথ্যা কথা বলতে পারে। নতুন নতুন কাহিনী বানায়। সেই কাহিনী দিয়ে জনগণকে বিমোহিত রাখতে চায়। কিন্তু এত বেশি কাহিনী বানিয়ে ফেলেছে, মানুষ এখন আর ওদের কাহিনী নিতে চায় না।’

বিজ্ঞাপন

মান্না বলেন, ‘এই যে সাহেদ কাহিনী, এটা দুই তিনি দিন চালাবে। টেলিভিশনগুলোকে তারাই লাইসেন্স দিয়েছে। অতএব তাদেরকে বলবে, এটাই চালাও, এটা মানুষ খাবে ভালো। অথচ আমরা যখন প্রশ্ন করি, এই ৯ দিন সাহেদ কোথায় ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। আপনি তার এমডিকে প্রশ্ন করে জানলেন কোথায় আছে। সেই এমডিকে প্রশ্ন করলে জানতে পারবেন না, এই ৯ দিন কোথায় ছিল? ওটা বলবেন না। বললে, থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। এমন এমন লোকের নাম বেরিয়ে আসবে, তখন মুখ লুকাবার জায়গা পাবেন না।’

‘ওদের কে তো টেস্ট করতে দিয়েছিলাম, কী করব, কেউ তো টেস্ট করতে চায় না। অতএব আমরাও একটু বিভ্রান্ত হয়ে টেস্ট করতে দিলাম’— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মান্না বলেন, ‘স্বরাষ্টমন্ত্রী এত ছোট বিষয়ে যদি বিভ্রান্ত হন, তাহলে ওই লোকটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন কেন? পৃথিবীর ইতিহাসে আছে এই রকম ভুল করবার পরে অনেক বড় বড় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়করা পদত্যাগ করেছেন। ইনারা পদত্যাগ করবেন না ‘

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে লাইসেন্স দিলেন, তার আগে লাইসেন্স পরীক্ষা করলেন না কেন? এখন দেখছি আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতর আর মন্ত্রণালয় ঝগড়া করছে। বসের সাথে কর্মচারি ঝগড়া করে? মন্ত্রণালয় বড় না, অধিদফতর বড়?’

‘ওরা ডেকেছিল, আমি গেলাম, চুক্তি পড়ে দেখিনি’— স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মান্না বলেন, ‘তাহলে তুই আছিস কী করতে? একটা কোম্পানিকে কোভিড টেস্ট করতে দিবি। কিন্তু চুক্তির মধ্যে কি আছে মন্ত্রী পড়বে না। সেই মন্ত্রী আবার কেমন? উনি শুধু নিজে কথা বলেননি, বলেছেন অন্য মন্ত্রীরাও পড়েন না। বাহ! মন্ত্রীরা শুধু চা খাবেন, দাওয়াত খাবেন? সেই মন্ত্রী দিয়ে কী করব?’

‘সেই মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে করতে সময় পাচ্ছেন না। তাহলে কী কাজ করেন? মন্ত্রীদের ঠিক করতে পারছেন না কেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর ঠিক করতে পারছেন না কেন? হাসপাতাল বানাতে পরেন না কেন?’— প্রশ্ন মান্নার।

‘যাকে তাকে মন্ত্রী বানালে চামচামি ছাড়া আর কিছু করে না’— বলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে দেশ। তাই যদি হয়, ফরেন রিজার্ভ থেকে টাকা নিতে চান কেন? দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন ফরেন রিজার্ভ থেকে টাকা নিতে চান, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না দেশের অবস্থা কী। সুতরাং এই মুহূর্তে এই সরকারের চলে যাওয়া ফরজে আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেতে তাদেরকে হবেই, আজ হোক কাল হোক। যাওয়ার আগে যত তাড়াতাড়ি পারেন, সব চেয়ে ভালো হয়, ঈদের আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চলে যেতে বলেন।’

জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘অনতিবিলম্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকে বরখাস্ত এবং গ্রেফতার না করলে আমরা ধরে নেব, এই দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীরও সম্পৃক্ততা আছে। শুধু সাহেদ আর সাবরিনাকে গ্রেফতার করলে এই মামলা শেষ হয়ে যায় না। বিনা তদারকিতে, বিনা তদন্তে একটা লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালকে লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হয়। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া হাসপাতাল গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রকে হয়রানী করা হয়।’

‘আজকে যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি, স্বাস্থ্য সচিবসহ যারা এই চিুক্ততে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদেরকে অপসারণ করা না হয়, তাহলে এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আর শান্তিপূর্ণ থাকবে না। সরকারের পতন নিশ্চিত করতে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’— বলেন জুনায়েদ সাকি।

করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর