বিরাজনীতিকরণের ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’ পাচ্ছে আ.লীগ
১৬ জুলাই ২০২০ ১৯:৩২
ঢাকা: বাংলাদেশ কোনো সংকটে পড়লেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। চলমান করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংকটে বাতাসে সেই ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’ ভাসছে। রাজনীতিবিদদের খাটো করে, রাজনীতিতে বিতর্কিত করে আবারও চেষ্টা চলছে বিরাজনীতিকরণের। বিএনপি-জামায়াতসহ আরও সব অশুভ শক্তি নানাভাবে সক্রিয় হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন চলমান করোনা সংকট মোকাবিলা করে জীবন ও জীবিকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তখনই এসব অপশক্তি বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা বলেন। এসময় তারা সব ধরনের অপশক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান নেতাকর্মীদের। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির হাত শক্তিশালী করে অপশক্তিকে পরাজিত করার আহ্বান জানান।
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগ সভাপতিকে কারাবন্দি করার দিনটি স্মরণ করে বলেন, আজকের এই দিনে শেখ হাসিনাকে বন্দি করে গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারকে বন্দি করা হয়েছিল। তবে শেখ হাসিনা কারাগারে রেখেও তাকে দমাতে পারেনি। তিনি কারাগার থেকে যখনই চিকিৎসার জন্য বেরিয়েছেন, তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন— একমাত্র নির্বাচনই হলো সরকার পরিবর্তনের পথ। আমি নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো কিছু মানি না। বাংলার জনগণও মানবে না।
নানক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা সেদিন সংগ্রাম করেছিলাম। আজকে সেই দিন। আমাদের মনে পড়ে— গ্রেফতারের সময় শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। সেই খোলা চিঠি ছিল বাঙালি জাতির জন্য নির্দেশনা। সেই নির্দেশনা নিয়েই আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ সেদিন এক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সামনে রেখে নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সেই অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়েছেন। সেই আন্দোলনের ফল হলো শেখ হাসিনার কারামুক্তি।
‘কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না— সেদিন আমাদের দলের ভেতরে আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ছিল। ছিল দোদুল্যমানতা, কাপুরুষতা, আপসকামিতা। দল ভাঙার ষড়যন্ত্র হয়েছিল আবারও। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু আজ এই সংকটের মধ্যে আবার আমরা বাতাসে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। তাই আজকের শপথ হোক— সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অব্যাহত অগ্রযাত্রা আমরা রাখব রাখব,— বলেন নানক।
আব্দুর রহমান বলেন, কোনো অশুভ চক্রান্ত কখনোই সফল হতে পারে না, যদি না সেটা মানুষের জন্য রাজনীতি না হয়ে থাকে। কারাবন্দি শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণেই সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাহস পেয়েছিল এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করে প্রিয় নেত্রীকে মুক্তির পথ প্রশস্ত করেছিল। আজকের এই অবস্থায় একটা কথা বলে রাখা ভালো— যারা জনবিচ্ছিন্ন, যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী না দিলেও যারা নির্বাচনে জিততে পারবে না, এমন সব চক্রান্তকারীরা ওয়ান-ইলেভেনের সময় পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ছিল। কিন্তু আমাদের নেত্রী জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি আবারও প্রমাণ করেছিলেন— বাংলাদেশের মানুষের আস্থার জায়গা শেখ হাসিনা। তিনি সেই আস্থার জায়গাকে ধরে রেখেই আজ অবধি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
আব্দুর রহমান বলেন, কোনো অত্যাচার-নির্যাতন, গ্রেফতার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে দমাতে পারেনি, তাদের পথ রুদ্ধ করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও কোনো চক্রান্ত, কোনো ষড়যন্ত্রই আওয়ামী লীগের এই পথ চলাকে, শেখ হাসিনার এই অবিরাম পথ চলাকে রুখতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গণতন্ত্রকে বন্দি করার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে সেদিন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কারণ যাদের দুর্নীতি-দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল, সেই খালেদা জিয়া এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়নি।
এক-এগারোর সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন গণতন্ত্রের অগ্নিবীণা। তার ধমনী-শিরায় বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহমান। তিনি কোনো আপস জানেন না। তিনি পরাভব মানেন না। সেই কারণেই তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, আজ জনগণ যখন এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় আছে, তখন শেখ হাসিনা কিন্তু জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনো পর্যন্ত সাত কোটির বেশি মানুষকে সহায়তার আওতায় এনেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সেদিন যারা ষড়যন্ত্র করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার পটভূমি রচনা করেছিল, সেই ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা কিন্তু জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। তারা হারিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তারা দেশে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়, তখনই তারা ছোবল দেওয়ার অপচেষ্টা করে। বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে, কিভাবে গণতন্ত্রকে আবারো নস্যাৎ করা যায়। সেই চেষ্টা তারা এখনো অব্যাহত রেখেছে।
‘সংকট সংগ্রামে শেখ হাসিনা অবিরাম-অবিচল। তিনি সব সংকটে অবিচল থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সবার পক্ষ থেকে আমাদের দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানাই,’— বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এখনো আমরা দেখছি, আমরা বুঝতে পারছি যখনই বাংলাদেশের মানুষ সংকটে পড়ে, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং দেশকে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর তার পাশাপাশি একটি কুচক্রি মহল যখনই এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়, তখনই তারা ষড়যন্ত্র করে। তখনই তারা নানান ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়।
‘যখন আমরা দেখি এ দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য সমস্ত শক্তি, মেধা দিয়ে, প্রণোদনা দিয়ে দেশের মানুষকে জাগিয়ে তোলার আশায় আলোকিত করার জন্য, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন, তখন ষড়যন্ত্রকারীরা নীলনকশা করছে এই দুরবস্থার ভেতরেও। তারা রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে,— বলেন নাছিম।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আজ আমরা দেখি রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ বিভিন্ন পর্যায়ের মিডিয়া মোঘল থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওই কুচক্রী মহল নানানভাবে সম্পর্কিত। তাদের বিষয়টি কিন্তু আলোচিত হয় না, সমালোচিত হয় না। তাদের বিষয়টি দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হয় না। শুধু রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের জন্য, তাদের খাটো করার জন্য বিএনপি-জামায়াতসহ অপশক্তিরা সক্রিয় হয়েছে।
এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সজাগ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সজাগ আছে। সক্রিয় আছে। কোনো ষড়যন্ত্র, কোনো ধরনের অপপ্রচার বা বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র আমরা প্রতিহত করব। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েই যাব।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর,
শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
আ ফম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগ আব্দুর রহমান আলোচনা সভা কারাবন্দি দিবস জাহাঙ্গীর কবির নানক মতিয়া চৌধুরী শেখ হাসিনা