Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মতামত না নিয়েই অনলাইন ক্লাস চালু, বিপাকে রাবি শিক্ষার্থীরা


১৭ জুলাই ২০২০ ১১:০৩

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সবধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সভাপতিদের সঙ্গে উপাচার্যের এক ভার্চুয়াল সভা থেকে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত আসে। তবে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত না নিয়েই গত ৯ জুলাই থেকে অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর হঠাৎ এমন ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, করোনা মহামারিতে শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার একমাত্র উপায় হিসেবে অনলাইন ক্লাস নিয়ে আলোচনা চলছিল সংশ্লিষ্ট মহলে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ধীরগতির ইন্টারনেট, শিক্ষার্থীদের সবার হাতে স্মার্টফোন না থাকা, শিক্ষকদের প্রযুক্তি ব্যবহারের অদক্ষতা অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থী, যাদের হাতে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য দরকারি প্রযুক্তিপণ্য এবং উচ্চদামের ইন্টারনেট ডাটাপ্যাক কেনার সক্ষমতা নেই, তাদের ক্লাস বঞ্চিত করার নৈতিক অধিকার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, অন্তত শুরুটা করতে চান তারা। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করা যাবে।

বিজ্ঞাপন

সুপ্ত বিহঙ্গ নামের এক শিক্ষার্থী জনান, ‘অনলাইনে ক্লাস হবে ভালো কথা। কিন্তু আমি তো আমার স্মার্টফোন বিক্রি করে করোনাকালে পরিবারকে সাপোর্ট দিয়েছি। এখন নতুন করে ফোন কিনব সে সামর্থ্যও নেই। সেক্ষেত্রে আমি কীভাবে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেব?’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামে নেটওয়ার্কের যে অবস্থা তাতে ফেসবুকের একটা পোস্ট দেখতে গেলে বারবার বাফারিং করে। সেখানে অনলাইনে ক্লাস? যাদের এমন সমস্যা তারা কি তাহলে ক্লাস করবে না? নাকি যাদের নেট স্পিড ভালো শুধু তাদের জন্য অনলাইন ক্লাসের আয়োজন?’

ইংরেজি বিভাগের এম এ ওয়াহেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

অনলাইন ক্লাস নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে উপাচার্য বরাবর খোলা চিঠিও দিয়েছেন নাজমুস সাকিব নামের এক শিক্ষার্থী। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘অনেকের বাসায় ওয়াইফাই থাকলেও বর্ষাকাল হওয়ায় ক্লাসের সময়ে বিদ্যুৎ না থাকলে তাদের কি হবে? তাছাড়া রাবির ৪০ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওয়াইফাই সুবিধা আছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা আনুমানিক দুই হাজারের বেশি হবে না। তাহলে বাকি শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাসে অংশগ্রহণ করবে কিভাবে? অন্যদিকে সবার এলাকায় সমান নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নেই। তাই জুম অ্যাপে কিংবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হলে বৈষম্য হবে। যার ইন্টারনেট ভালো সে ভালো মতো ক্লাস করতে পারবে; আবার যার এলাকায় স্পিড কম সে অনেক কিছুই মিস করবে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অনুষদের ডিনদের দাবি ক্লাস শুরুর প্রথম দিন (৯ জুলাই) ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে যুক্ত ছিলেন। তবে ডিনদের দাবি করা উপস্থিতির হার নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন সংশ্লিষ্ট অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুয়েকটি ক্লাস নেওয়া হয়েছে। বিভাগগুলো এখনও রুটিন তৈরি করতে পারেনি। রুটিন তৈরির জন্য একাডেমিক কমিটির মিটিং হবে। আশা করি দ্রুতই রুটিন অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগের ক্লাস শুরু হবে।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা শুরুটা করতে চেয়েছি। সেটা হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে সব বিভাগে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের সমস্যায় কথা বিবেচনায় রেখে উপাচার্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি অনলাইন ক্লাসের সমস্যা সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করবেন। পরে সেটা সমাধান করা হবে।’

অনলাইন ক্লাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর