Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় বন্ধ ট্রাইব্যুনাল, অর্থকষ্টে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা


১৮ জুলাই ২০২০ ১০:৩০

ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে অধস্তন আদালত পর্যন্ত সবখানে ভার্চুয়ালি বিচার কাজ শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। দীর্ঘদিন ধরে বিচার কাজ না চলায় বন্ধ রয়েছে তাদের আয়-রোজগার। ফলে চরম অর্থকষ্টে তাদের দিন কাটছে।

ভার্চুয়ালি সব আদালত চালু হলেও আইনি জটিলতায় অনলাইনে ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, আইনি বাধ্যবাদকতায় বিচার বন্ধ থাকলেও খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার মতো অবস্থাতো আমাদের নেই। চরম অর্থকষ্টে এখন সংসার চালাতে গিয়ে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছি।

বিজ্ঞাপন

আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে আদালত বন্ধ। অর্থনৈতিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছি। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবে আসামিপক্ষের হয়ে মামলা পরিচালনা করে আসছি অনেকদিন। এখানকার মামলা পরিচালনা সময় সাপেক্ষ হওয়ায় অন্য কোনো কোর্টে মামলা নিইনি। ফলে এই মামলার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে আছি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সরকারি বেতনভুক্ত। আমাদের তো কোনো বেতন নেই। হাতে অন্য কোনো কোর্টের মামলাও নেই। মামলা না থাকলে তো আইনজীবীদের আয় রোজগারও বন্ধ থাকে। তার মধ্যে আসামির স্বজনদের চাপে করুণ অবস্থার মধ্যে দিন পার করছি।’

ট্রাইব্যুনালে ১৭টি মামলায় আসামিদের পক্ষে ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে কাজ করে আসা এ আইনজীবী বলেন, ‘আমি যাদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়ছি তাদের অধিকাংশের বয়সই ৮০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে। এ কারণে তাদের স্বজনরা বেশি উদ্বিগ্ন। কারাগারে তাদের চিকিৎসা এবং জামিন আবেদনের জন্য তারা চাপাচাপি করছেন। কিন্তু আমার তো কিছু করার নেই। ট্রাইব্যুনাল না চললে জামিন আবেদন করারও সুযোগ নেই। এ অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে আমাদের।’

বিজ্ঞাপন

আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম জানান, ‘খুব চাপ মক্কেলের। প্রতিনিয়ত ফোন করে জানতে চায়- সব কোর্ট চলে ট্রাইব্যুনাল চলে না কেন? আসামিদের স্বজনদের হয়রানি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ট্রাইব্যুনালে কোনো আবেদন করতে পারছি না। অনেক আসামি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন- তাদের চিকিৎসা কিংবা জামিনের কোনো আবেদন করতে পারছি না। তাছাড়া আসামিদের স্বজনরাও চায়- যাই হোক না কেন, বিচার শেষ হোক। মামলা না চলায় অর্থনৈতিকভাবেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভিন্ন আইনে পরিচালিত হয়। এটি একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র আদালত। অন্যান্য আদালত থেকে এর বিধি আলাদা। যেহেতু এটি একটি ভিন্ন আদালত সেহেতু এখানে ভার্চুয়ালি বিচার চালানো সম্ভব নয়। কেননা এ আইনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নেওয়া হয়। অভিযোগ গঠন ও মামলার রায় দেওয়ার সময় বিচারক প্যানেলের তিনজন বিচারককে উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলের একজন সদস্য বিচারপতি অসুস্থ হয়ে ভারতে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষমাণ মামলার রায়ও দেওয়া যাবে না।’

‘এছাড়া করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি ও সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বয়স্কদের আদালতে উপস্থিত না হতে বলা হয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রসিকিউশন টিমের অধিকাংশ সদস্যের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। এসব বিবেচনায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ তেমনভাবে শুরু না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি’— বলেন রানা দাস গুপ্ত।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল একটি বিশেষ আইনে চলে। এটি অন্য যেকোনো আইন থেকে আলাদা। ট্রাইব্যুনালে মূলত আসামি গ্রেফতার থাকলে তার উপস্থিতিতে বিচার কাজ পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন করোনার এই অবস্থায় আসামি হাজির করা যাচ্ছে না। এই কারণে বিচার কাজ চলছে না। তবে একেবারে যে কাজ চলছে না, তা নয়। মামলার ধার্য তারিখ পরিবর্তন করা হচ্ছে। অন্য কোনো আবেদন থাকলে সেটিও নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের সদস্য একজন বিচারপতি অসুস্থ থাকায় তিনি ভারতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি না আসা পর্যন্ত মামলার শুনানি হচ্ছে না।’

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সমস্যার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘জরুরি কোনো বিষয় থাকলে তারা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। সময় আবেদনসহ অনেক আবেদনই অনলাইনে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’

অনেকদিন ধরে বিচার কাজ বন্ধ থাকায় মামলা জট হবে কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে মামলা আছে ৩৬ থেকে ৩৭টা। মামলার কাজ একবার শুরু হলে পরবর্তীতে কোনো সময় না দিয়ে দ্রুত মামলার কাজ শেষ করা হবে।’

জানা যায়, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২৫ মার্চ ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৪১টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এসব মামলার মোট আসামি ছিল ১০৫ জন। তার মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৯৫ জন। আটক আসামির সংখ্যা ৪৭ জন আর পলাতক আসামির সংখ্যা ৪৮ জন। আটক আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৩ জন আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সংখ্যা ৩৬ জন। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির সংখ্যা ১২ জন। রায় হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে আটজন। আর রায় হওয়ার আগে পলাতক অবস্থায় মারা গেছে দুজন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আসামি সংখ্যা ৬ জন।

ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে ৩৬টি মামলা। আর রায়ের অপেক্ষায় একটি। এ পর্যন্ত তদন্ত সংস্থা ৬৬৭টি অভিযোগের মধ্যে ২১০ জনের বিরুদ্ধে ৭৬টি মামলা করেছে। তার মধ্যে ৪৯টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। আরও ২৮টি মামলার তদন্ত চলছে। গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনকালে ২২ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। এ কারণে পুলিশের কয়েকটি ব্যারাক লকডাউনও করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৬৬ দিন ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে খুলতে থাকে সরকারি-আধা সরকারি অফিস। সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয় গণপরিবহনসহ সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র আদালতে এখনও নিয়মিত কোর্ট চালু হয়নি। এর জন্য আইনজীবীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

আইনজীবী উচ্চ আদালত করোনাভাইরাস ট্রাইব্যুনাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর