‘দেশের উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কূটনীতি কাঠামো থেকে বের হতে হবে’
১৮ জুলাই ২০২০ ২২:৪১
ঢাকা: দেশের উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কূটনীতি কাঠামো থেকে বের হয়ে জনকূটনীতির দিকে এগুতে হবে। এছাড়া ডিজিটালি বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। বিশ্বে নিজেদের পরিচিতি জানান দেওয়ার জন্য ডিজিটাল মাধ্যম অনেক বড় হাতিয়ার, যার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ইয়ুথ পলিসি ফোরামের আয়োজনে ‘রোড টু রিমফর্স এপিসড এক: বাংলাদেশ ফরেন পলিসি ইন দ্য ওয়েক অব কোভিড-১৯ প্যানডামিক’, শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় শনিবার (১৮ জুলাই) বক্তারা এসব কথা বলেন।
সাবেক সচিব ও কূটনীতিক ফারুক সোবহানের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, সাবেক কূটনীতিক মো. হুমায়ুন করিব এবং অর্থনীতিবিদ ড. আখতার মাহমুদসহ ইয়ুথ পলিসি ফোরামের সদস্যরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে ইয়ুথ পলিসি ফোরামের সদস্যরা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বর্ডার কিলিং একটি স্পর্শকাতর বিষয়। বিএনপির সময় যে সংখ্যা তিন শতাধিক ছাড়িয়ে গিয়েছিল তা আমরা গত ১০ বছরে এক সংখ্যায় (single digit) এ নামিয়ে এনেছি। এ বছরের জুলাই পর্যন্ত এ সংক্রান্ত আপডেট আমরা ভারতকে জানিয়েছি। আমরা তাদের মনে করিয়ে দিয়েছি যে, বর্ডারে কোনো অস্ত্রের ব্যবহার না করার জন্য (no use of lethal weapon) আমরা উভয়েই কথা দিয়েছি, যা মেনে চলা উচিত।’
চলমান কূটনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে বলতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকফা চুক্তি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক উন্নয়ন ঘটিয়েছে, অথচ শুরুতে এই চুক্তি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোস্ট কোভিড পিরিয়ডেও বাংলাদেশ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে দেরি হলেও, এখনকার সুসম্পর্কের জন্য, এই কোভিড পিরিয়ডেও বাংলাদেশের নাগরিকরা তুলনামূলকভাবে কম প্রভাবিত হয়েছে।’
‘ডিজিটালি পিছিয়ে থাকার কথা স্বাকীর প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগে যে দেশগুলোর সঙ্গে আমরা দাতা-গ্রহীতার মতো আচরণ করাতাম, আজ তাদের সঙ্গে আমরা দর কষাকষি করতে পারি।’
সাবেক কূটনীতিক মো. হুমায়ুন করিব বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বর্তমান উত্তেজনা এশিয়ার দেশগুলোতে প্রভাব ফেলছে। রিজিয়নাল মেট্রিক্স, দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলের সম্পর্কে অনিরাপত্তা দেখা দিচ্ছে। মূলত ধর্মীয় দিক থেকে জাতীয়তাবাদ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ইন্দো-প্যাসিফিক এবং বিআরআই দুটোই এই অঞ্চলের সম্পর্ক নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ডিপ্লোমেসি এখনও প্রাতিষ্ঠানিক করে রেখেছি। আমাদের সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের ডাইভারসিভ হতে হবে। গ্লোবাল কনভার্সনে আমাদের যুক্ত হতে হবে। আমাদের ইস্টের সঙ্গে ডিপ্লোমেসি ফোকাসটা আরেকটু বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। বিদেশের লোকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমাদের ডিজিটাল কূটনীতির বিকাশ করা দরকার। ডোমেস্টিকেশন অব ফরেন পলিসি আমাদের দেশে খুবই দুর্বল। অপারেশনাল সেক্টরে এটা আরও বাড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল ডিপ্লোমেসির চেয়ে সহজ পদ্ধতি আর নেই। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য ডিজিটাল ডিপ্লোমেসির সঙ্গে তরুণদের যুক্ত করা প্রয়োজন। তরুণরা এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা যদি কূটনীতির সঙ্গে বিকাশকে সংযুক্ত করতে না পারি তবে যে সমস্যাগুলো হচ্ছে সেখানে কিন্তু লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না।’
অর্থনীতিবিদ ড. আখতার মাহমুদ বলেন, ‘বিডা’র (BIDA) মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। কিন্তু রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য মূলত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছে না।’ তাই বিডার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করলে বা সমন্বয় থাকলে বিদেশি বিনিয়োগের এই প্রতিবন্ধকবতা এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ইয়ুথ পলিসি ফোরাম উন্নয়ন কূটনীতি জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রাতিষ্ঠানিক মো. শাহরিয়ার আলম