‘দেশে করোনার ৮ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত, টিকা আবিষ্কারে সহায়ক হবে’
১৯ জুলাই ২০২০ ২১:৪২
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) জিনোম সিকোয়েন্সে আটটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চিহ্নিত হওয়া বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের দেশের জন্য কার্যকর টিকা আবিষ্কারে সহায়ক হবে। এছাড়াও দেশে করোনাভাইরাস ৫৯০ বার জিন পরিবর্তন করেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (এনসিবিআই) ও গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা’য় (জিএসএআইডি) ১৭১টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ডেটা জমা দেওয়ার পর রোববার সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিসিএসআইআরের গবেষকরা।
বিসিএসআইআরের ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিকেল মেজারমেন্টস-ডিআরআইসিএম ল্যাবে সংবাদ সম্মেলনে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবের প্রধান সেলিম খান।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সেলিম খান জানান, করোনাভাইরাসে ১ হাজার ২৭৪টি প্রোটিন থাকে। তার মধ্যে ২১২ থেকে ৫২৩ পর্যন্ত হলো গুরুত্বপূর্ণ স্পাইক প্রোটিন। এর মধ্যে আমরা কোনো মিউটেশন পাইনি। ৬১৪-জি করোনাভাইরাস যে স্ট্রেইনটি সিকোয়েন্সিংয়ে শনাক্ত হয়েছে, তা কিন্তু এর বাইরে পড়ছে। আমরা প্রতিটি জিনোম সিকোয়েন্সে ‘ডি৬১৪জি’ করোনাভাইরাস স্ট্রেইনটি পেয়েছি। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস এরই মধ্যে তার জিনোমিক লেভেলে ৫৯০টি ও প্রোটিন লেভেলে ২৭৩টিরও বেশি পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘ডি৬১৪-জি’ করোনাভাইরাস স্ট্রেইনটি সিকোয়েন্সিংয়ে শনাক্ত হয়েছে, যাকে আমরা বাংলাদেশে সংক্রমণের প্রধান কারণ হিসেবে বলছি।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১৭৩টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির জিনেমিক লেভেলে ৫৯০ ও প্রোটিন লেভেল ২৭৩ বার মিউটেশন হয়েছে। আটটি ইউনিক মিউটেশন পাওয়া গেছে, যা বিশ্বের কোনো দেশের ডাটার সঙ্গে মিল নেই। এটি এখন গবেষণার মূল বিষয়। আমরা ২১২ থেকে ৫২৩ পর্যন্ত আটটি মিউটেশন পেয়েছি ইউনিক, এই মিউটেশনগুলো পৃথিবীর অন্য কোথাও ঘটেনি। আমাদের নজর রাখতে হবে, আমরা আরও ইউনিক মিউটেশন পাই কি না।
টিকার ক্ষেত্রে এই গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে ড. সেলিম খান বলেন, যখন কোনো মেডিসিন, ভ্যাকসিন ডিজাইন করবে, সমস্ত মিউটেশন মাথায় রেখে ডিজাইন করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ৬৭ হাজার ৫২৪-এর বেশি করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স ডাটা বিশ্বজুড়ে গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা’তে (জিআইএস এইড) প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১৭৩টি করোনা ভাইরাসের জীবন রহস্যের তথ্য তথা জিনোম সিকুয়েন্স পাঠানো হয়েছে। এগুলো থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের করোনাভাইরাসটি সম্পর্ক ইতালির ভাইরাসটির সঙ্গে বেশি নিবিড়।
বিসিএসআইআরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের যে গবেষণা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশকে বিবেচনায় রাখা হবে, তা এখন নিশ্চিত হয়েছে। ব্রিটেন ও আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তারা যে পরিমাণ সিকোয়িন্সিং ডাটা চেয়েছে তা দিতে সক্ষম হয়েছি। এখন বলা যায় করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আসলে বাংলাদেশের জন্য কার্যকর ভ্যাকসিন আমরা পাব।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে বলা যায়, বিসিএসআইআর যেসব ডাটা পেয়েছে তাতে ইতালির করোনার সঙ্গে মিল আছে। তবে ইউনিক যে কয়টি সিকোয়েন্স মিলেছে, তা আরও নমুনায় পাওয়া যায় কি না তা দেখতে হবে। বিস্তর গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে সংক্রমণের ধরনের বিষয়ে। সেজন্য আরও সময়ের প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের সব বিভাগ থেকে সংক্রমণ হার ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে তিন শতাধিক জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিসিএসআইআরের একটি গবেষণা দল সারাদেশ থেকে নমুনা ও রোগীর মেডিকেল হিস্টোরি সংগ্রহ এবং জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
এতে আরও জানানো হয়, করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের ডাটার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী ৭৮টি ভ্যাকসিন প্রকল্প চালু আছে। আরও ৩৭টি চালু হবে। বাংলাদেশের ডাটাগুলো ‘জিআইএস এইডে’ প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে যে কেউ চাইলে ভ্যাকসিন ডিজাইনের জন্য বাংলাদেশের ডাটা নিয়ে কাজ করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক ডা. এ কে এম শামসুজ্জামান।
করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ জিনোম সিকোয়েন্স বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিসিএসআইআর