করোনায় সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীতে লোকসান ৩০০ কোটি টাকা
২০ জুলাই ২০২০ ০৭:৫৭
সিরাজগঞ্জ: করোনাভাইরাসের কারণে তাঁতশিল্প লোকসানে নুয়ে পড়ছে। তাই ব্যস্ততা নেই সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীতে। গত পহেলা বৈশাখ থেকে ঈদ-উল-ফিতর পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। যে কারণে জেলার প্রায় সব তাঁত কারখানা বন্ধ রয়েছে। আর বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় ৮ লাখ নারী-পুরুষ। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফসহ প্রণোদনা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁত মালিকরা।
সরজমিনে জানা যায়, জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, সদর, কামারখন্দ, বেলকুচি, রায়গঞ্জ, চৌহালী, কাজিপুরে তাঁত কারখানার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজারের অধিক। এই শিল্পের সাথে জড়িত আছে ৮-৯ লাখ শ্রমিক, মালিক ও কর্মচারী। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হয়। বিশেষ করে উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, পাঁচলিয়া বাজারে সাপ্তাহে দু’দিন বিশাল কাপড়ের হাট বসে। এসব হাটে লাখ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন এখানে। এমনকি সিরাজগঞ্জের উৎপাদিত কাপড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে।
তবে করোনার কারণে থমকে গেছে সব। বৈশাখ থেকে শুরু করে দু’টি ঈদ পর্যন্ত তাঁত শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা দাবি তাঁত মালিকদের। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ ও দুই ঈদকে সামনে রেখে তাঁতপল্লীতে শুরু হয় খটখট শব্দ ও তাঁত পণ্য উৎপাদনের আমেজ। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জেলার তাঁত শিল্পের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। শুধু পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জেলায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার তাঁতপণ্য উৎপাদিত হতো। কিন্তু এবছর তাঁত কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদনও বন্ধ থাকে। এ কারণে তাঁত মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জ জেলা তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত। এ জেলায় তাঁত পরিবারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৭০ এবং তাঁত সংখ্য প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজারের অধিক। প্রতি বছর এ জেলায় হস্তচালিত তাঁত থেকে প্রায় ২৩ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়া এ শিল্পের সাথে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলার কয়েকটি হাটে তাঁতিদের উৎপাদিত বস্ত্র বিক্রি হয়ে থাকে। যার মধ্যে সোহাগপুর হাট, এনায়েতপুর হাট, শাহজাদপুর হাট ও বেলকুচির হাট উল্লেখযোগ্য।
সদর উপজেলার তাঁত ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল হোসেন বলেন, ‘তাঁতের ব্যবসা নাই। করোনাভাইরাস তাঁতিদের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। ব্যাংক ঋণ কিভাবে শোধ করবো তা নিয়ে চিন্তাই আছি। শুধু ব্যবসায়ীরা না এর সাথে শ্রমিক-কর্মচারীরাও পড়ছেন বিপাকে।’
কামারখন্দ উপজেলার দোগাছী গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে ঈদুল আজহা পর্যন্ত তাঁতের ব্যবসা হয় জমজমাট। কিন্তু প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে বাংলা নববর্ষ ও ঈদে কোনো ব্যবসা হয়নি। এ কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বেলকুচি উপজেলার তাঁত শ্রমিক সুজন মিয়া বলেন, ‘করোনার কারনে নিঃশব্দ হয়ে পড়েছে তাঁতপল্লী। প্রতিমাসে আমরা ৮-৯ হাজার টাকা ইনকাম করতাম, সেই পথটি বন্ধ হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরা কাজ করতে পারছি না। বেকার হয়ে পড়ে আছি। কেউ কোনো সহযোগিতা করছে না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ তাঁত শিল্পের সাথে জড়িতদের আর্থিক অনুদান দেয়।’
সিরাজগঞ্জ তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক হাজী বদি-উজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু কারখানা খোলা হয়েছে। তবে রংয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। জেলায় তিন লাখ তাঁত রয়েছে (হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম)। বৈশাখ থেকে শুরু করে দুইটি ঈদ পর্যন্ত তাঁত শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।’ এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফসহ প্রণোদনা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘বর্তমান তাঁত শিল্পের অবস্থার বিষয়টি উল্লেখ করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ হাতে পেলেই তাঁত মালিকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
উল্লাপাড়া কাজিপুর কামারখন্দ কোভিড-১৯ চৌহালী তাঁতপল্লী তাঁতশিল্প নভেল করোনাভাইরাস প্রণোদনা বেলকুচি রায়গঞ্জ শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জ