নেটওয়ার্ক সমস্যায় রাবি শিক্ষার্থীরা, মেলেনি কম দামে ইন্টারনেট
২০ জুলাই ২০২০ ১০:০০
রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৯ জুলাই থেকে শুরু হয় অনলাইনে ক্লাস। করোনা পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই অনলাইন ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়েছে নানা সমস্যায়। রাবি শিক্ষার্থীরা জানান, শুরুতে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যায়নি, অন্যদিকে নেটওয়ার্কেও ভীষণ সমস্যা।
শিক্ষার্থীরা জানান, অনলাইনে লাইভ ক্লাস করার মতো নেটওয়ার্ক মোবাইল ডাটায় মেলে না। বেশি দামে ডাটা কেনার সামর্থ্যও অনেকের নেই। তাই অনলাইনে ক্লাস চালাতে হলে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ও লাইভ ক্লাসের বদলে রেকর্ডেড ক্লাস দিতে হবে।
অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘শেষ ক্লাসে বসেছি গত ১৬ মার্চ। তারপর কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের আশংকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্যাম্পাস। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাসের ব্যাপারে হঠাৎ ১ দিন আগেই জানানো হয় ক্লাস শুরু হবে। গ্রামে ভীষণ নেটওয়ার্কের সমস্যা। এই দুর্যোগকালে প্রতিদিন একশ-দুইশ টাকার ডাটা কিনে অনলাইনে ক্লাস করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিভাগে গত একমাস যাবৎ অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। এটাকে কোনোভাবে ক্লাস বলা যাবে না, বলা যায় জাস্ট ছাত্র-শিক্ষক মতবিনিময় বা ইন্টারেকশন বলতে পারেন। প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসই করতে পারছে না। ক্লাস প্রতিনিধি (সিআর) হিসেবে আমার মনে হয়েছে, গ্রাম এলাকায় একেবারেই নেটওয়ার্ক থাকে না, কারও মাঝেমধ্যে থাকে, যেটা দিয়ে লাইভ ক্লাস করা সম্ভব না।
‘ক্লাসের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ হাজার হাজার টাকা খরচ করে ক্লাস করা সম্ভব নয়। আমি যদি জুমের কথা বলি তাহলে এক ঘণ্টা ক্লাসে প্রায় ৫০০ এমবি’র মত খরচ হয়। তাই দিনে যদি ৩টা ক্লাস করা হয় তাহলে ১.৫ জিবির মত খরচ, যেটার অনেকের পক্ষেই বহন করা সম্ভব নয়। এগুলো চিন্তা করে আমরা কয়েকদিন ক্লাস করেই সব ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছি। তবে যদি ক্লাস করা একান্তই বাধ্য হয়, তবে স্যাররা যদি ভিডিও রেকর্ড করে রাখেন তাহলে একটু ভালো হয়’ বলেন ইইই’র এই ক্লাস প্রতিনিধি।
উর্দু বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুইটি আক্তার বলেন, ‘অনলাইনে ২-১ দিন ক্লাস করাটা ব্যাপার না। কিন্তু জুম অ্যাপ বা গুগল-ক্লাসরুমের মাধ্যমে সপ্তাহে ৪-৫ দিন ক্লাস করাটা কষ্টকর। ক্লাসগুলোর সময়সীমা সাধারণত ১ ঘণ্টা করে, আর তাতে দেখা যাচ্ছে একটা ক্লাস করতে গিয়েই অনেক এমবি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমার এখানে যেহেতু জিপি বাদে কোনো মোবাইল অপারেটরেই ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না সেহেতু আমি জিপি ব্যবহার করছি। এর ১ জিবি ইন্টারনেটের দাম ৫২ টাকা। তাহলে একটু ভেবে দেখুন এই ক্লাস করার পেছনে প্রতি মাসে কত টাকা ব্যয় হবে! তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ইন্টারনেট কেনার অর্থ বহন করেন তাহলে হয়তো অনেকের কাছেই এটা অতিরিক্ত একটা বোঝা মনে হবে না।’
অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মৌ সাহা বলেন, ‘অপরিকল্পিত, অপ্রস্তুত, ও বৈষম্যমূলক পন্থায় ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে। মহামারির কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বাড়ি ফিরে গেছে এবং প্রান্তিক স্থানে উপযুক্ত ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বিভাগের ১২০ জনের একটি ক্লাসের জরিপে দেখা যাচ্ছে ৩৫-৪০ জন শিক্ষার্থীরই অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার মতো ডিভাইস বা ইন্টারনেট কেনার টাকা নেই। ইন্টারনেট খরচ কর্তৃপক্ষ বহন না করলে বৈষম্যের শিকার হবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। আর ক্লাসগুলো ভিডিও করে আপলোডের বিষয়ে ওভাবতে হবে। এতে ইন্টারনেট খরচ অনেক কমবে বলে আমি মনে করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের হাসান রেজা বলেন, ‘আমার অধিকাংশ সহপাঠী নেটওয়ার্ক সমস্যা, ইন্টারনেট ও স্মাটফোনের অভাবে ক্লাস করতে পারছেনা। অনলাইনে ক্লাস করার জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাজেট (ল্যাপটপ, স্মার্টফোন) নেই, ইন্টারনেট কেনার সামর্থ্যও অনেকের নেই, আর দুর্বল ইন্টারনেট সিগন্যাল তো আছেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইন্টারনেট ফ্রি দেওয়ার উদ্যোগ নিলে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসমুখী হবে।’
ফোকলোর বিভাগের সাওদা জামান রিসা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির জন্য অনেকের পরিবারের আর্থিক অবস্থায় ভাঙন ধরেছে। তাই ইন্টারনেট প্যাকেজ ক্রয়ের সক্ষমতা অনেকেরই নেই। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার যদি ইন্টারনেট বিলের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন তবে এ সমস্যা কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস এ অংশ নিতে পারবে। অন্যদিকে পিডিএফ বই শেয়ার এবং ভিডিও করে ক্লাসগুলো আপলোড দিলে স্বল্প ইন্টারনেটে তা শিক্ষার্থীদের জন্য সহজলভ্য হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা অনলাইন ক্লাস শুরু করতে চেয়েছি। তা আপাতত শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমস্যায় কথা বিবেচনায় রেখে উপাচার্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি অনলাইন ক্লাসের সমস্যা সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করবেন। পরে সেটা সমাধান করা হবে।’
এর আগে, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে কীভাবে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়ে প্রস্তাব করেছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও টেলিকম কোম্পানিগুলোকে সর্বনিম্ন হারে ইন্টারনেট দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সেসব কথা ‘ফাঁকা বুলি’ই থেকে গেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
অনলাইন ক্লাস ইন্টারনেট কোভিড-১৯ ডাক ও টেলিযোগাযেগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার নভেল করোনাভাইরাস নেটওয়ার্ক রাজশানী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি