প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই, জলাবদ্ধতা নিরসন করছে মেহেরপুরের গ্রামবাসী
২০ জুলাই ২০২০ ১৮:০৮
মেহেরপুর: পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রেখে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় পানিতে আবদ্ধ মেহেরপুরের গাংগী উপজেলার ষোলটাকা গ্রামবাসীরা। টিকে থাকার তাগিদে স্বেচ্ছায় পানি নিষ্কাশন করছেন তারা। এর আগে, পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা হলেও স্থায়ীভাবে গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ দূর হয়নি। বরং সরকারি অনুমতি ছাড়াই ‘একদল’ খাল ও পুকুর খনন করেই যাচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নজরদারি নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ষোলটাকা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে অন্তত ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এ ছাড়া গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারী অনুমতি না নিয়ে খালের মুখে পুকুর খনন করায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। ফসলি জমি ও গবাদী পশু নিয়ে বিপাকে গ্রামবাসীরা। কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতেও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের গাড়িপাড়া ও শেখ পাড়ার পাশ দিয়ে কাস্টদহ গ্রামে যাওয়ার পথে কোথাও কোমর পানি আবার কোথাও হাঁটু পানি। গ্রামের অন্তত ২০০ পরিবার বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রাম বানিয়াপুকুর ও যুগীরগোফায়। যারা শহরে ব্যবসা করেন তারা আগেই গ্রাম ছেড়েছেন।
স্থানীয় যুবক মুনতাসির মিলন আশা বলেন, অনেক বছর আগে যারা ভুল করে যেখানে সেখানে পুকুর খনন করেছেন তাদের ভুলের খেশারত এখন পুরো গ্রামবাসীকে দিতে হচ্ছে। জনপ্রতনিধিরা বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার উল্টো হয়েছে। আবার যারা পুকুর খনন করেছে তারাও ছাড় দিতে নারাজ। একই কথা জানালেন ব্যবসায়ী ময়নাল হক ও নিরাপদ দাস।
গ্রাম ছেড়ে বানিয়াপুকুর গ্রামে আশ্রয় নেয়া হারুণ, বুলু ও রফিক জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে গ্রাম থেকে পানি বের হতে না পারায় অধিকাংশ বাড়িতে পানি ওঠে। গবাদী পশু নিয়ে কষ্টের সীমা থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে তারা গ্রাম ছেড়েছেন। শুষ্ক মৌসুমে বাড়ি ফিরবেন। আগামী কয়েক বছরে শতাধিক পরিবার গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে অন্যগ্রাম ও শহরে চলে যাবেন বলে মনে করেন তারা।
গ্রামবাসীরা আরো জানান, পুকুর খননের নীতিমালা আছে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই পুকুর খনন করতে পারে না। অথচ এখানকার লোকজন ইচ্ছামত পুকুর খনন করলেও প্রশাসনের কোন লোক তাদেরকে নিষেধ করেনি।
পুকুর খনন কারী আলামীন জানান, খালের মুখে তাদের জমি। ওই জমিতে কোন ফসল হয় না। বছরের পর বছর পড়ে থাকায় মাছের ঘের দেয়া হয়েছে। নিজের জমিতে পুকুর খননের কোন নীতিমালা আছে বলে তার জানা নেই।
ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর অনেকবারই আবেদন করা হয়েছে। কিন্ত কোন সুরাহা হয়নি। তবে গ্রামবাসীর দুর্দশা লাঘবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগামীতে সরকারি বরাদ্দ এলে সহযোগীতা করা হবে।’
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘গ্রামবাসীর দুর্দশার কথা জেনেছি। সরকারিভাবে সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো।’