Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অভিযানে তরুণের লাশ : এসআই বরখাস্ত, ওসিকে শোকজ


২০ জুলাই ২০২০ ১৯:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে অভিযান চলাকালে এক তরুণের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সাদা পোশাকে ঘটনাস্থলে যাওয়া ডবলমুরিং থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. হেলালের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া অধঃস্তন কর্মকর্তার সুশৃঙ্খল আচরণ নিশ্চিত করতে না পারায় ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশকেও দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি।

সোমবার (২০ জুলাই) দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি পশ্চিম) মো. মনজুর মোর্শেদ এই প্রতিবেদন সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। এরপর অভিযুক্ত এসআই হেলালকে সাময়িক বরখাস্ত ও ওসি সদীপ কুমার দাশকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে এসআই হেলাল এককভাবে ঘটনার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি সদীপ ‍কুমার দাশকে শোকজ করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে হবে।’

গত১৬ জুলাইরাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার বাদামতলীর বড় মসজিদ গলির একটি বাসা থেকে মো. মারুফ (১৯) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই তরুণ সন্দেহভাজন মাদক বিক্রেতা বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকার লোকজনের ভাষ্য অনুযায়ী, মারুফের বাসার পাশে সন্ধ্যায় পুলিশের এক সোর্সকে চোর সন্দেহে পিটুনি দেয় এলাকার লোকজন। এ ঘটনার পর ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল মারুফকে আটক করতে যায়। এলাকার লোকজন তাকে লাঞ্ছিত করে। পরে থানা থেকে পুলিশের টিম যায়। মারুফের মা-বোনসহ প্রতিবেশিরা সড়ক অবরোধ করে তাকে বাধা দেয়। ততক্ষণে মারুফ গা ঢাকা দেয়। তখন তার মা ও বোনকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নেয়। তারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এর মধ্যে মারুফ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে বলে তথ্য দিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার পর রাতেই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাস্তায় নেমে আসে। মারুফের লাশ উদ্ধার করতে গেলে বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। বিক্ষোভের মুখে নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার ফারুকুল হক অভিযুক্ত এসআই মো. হেলালকে ক্লোজ করার ঘোষণা দেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনার পর প্রথমে সিএমপির ডবলমুরিং জোনের সহকারি কমিশনার শ্রীমা চাকমাকে প্রধান ও ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেনকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ডিবি’র উপ-কমিশনার মনজুর মোর্শেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- ডবলমুরিং জোনের সহকারি কমিশনার শ্রীমা চাকমা ও বিশেষ শাখার সহকারি কমিশনার নুরুল আফসার ভূঁইয়া।

তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-কমিশনার মনজুর মোর্শেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমিশনার স্যারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমরা মারুফের মা-বোনসহ পরিবারের ৬ সদস্য, ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শী এবং ১৫ জন পুলিশ সদস্যের বক্তব্য নিয়েছি। পাঁচ দফা সুপারিশসহ ১৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’

তদন্তে উঠে আসা তথ্যের বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা উল্লেখ করেছি, এসআই হেলাল কাউকে কিছু অবহিত না করে, থানায় জিডি না করে সাদা পোশাকে ঘটনাস্থলে যান। এ বিষয়ে তিনি কোনো নোট দেননি। সিনিয়র অফিসারদের মৌখিকভাবেও কিছু জানাননি। এভাবে সাদা পোশাকে অভিযানে যাবার নিয়ম নেই। এসআই হেলাল ঘটনাস্থলে গিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি হ্যান্ডলের পরিবর্তে মারামারি শুরু করেন এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দেন।’

ওসি সদীপের বিষয়ে মনজুর মোর্শেদ বলেন, ‘ওসি’র কমান্ডের ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে। অধঃস্তন অফিসারের শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত এবং নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা আছে।’ তদন্ত প্রতিবেদনে এসআই হেলালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে মারুফের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানায় কর্মরত ১২ জন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) একযোগে বদলি করা হয়েছে। তবে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বদলি করা হয়েছে।

বদলি হওয়া উপ-পরিদর্শকদের (এসআই) মধ্যে সর্বাধিক ছয়জন সিএমপির দক্ষিণ বিভাগের। তারা হলেন- কোতোয়ালী থানার এসআই সজল কান্তি দাশ, তারিকুজ্জামান, সরদঘাট থানার এসআই তন্ময় ভট্টাচার্য্য, মোর্শেদ আলম, বাকলিয়া থানার এসআই এসএম জামাল উদ্দিন, রেজোয়ানুল ইসলাম।

এছাড়া উত্তর বিভাগের বায়েজিদ বোস্তামি থানার এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম, পাঁচলাইশ থানার আব্দুল মোমিন, চান্দগাঁও থানার সালাউদ্দিন খান নোমান, পশ্চিম জোনের ডবলমুরিং থানার এসআই হাসানুজ্জামান রোমেল, হালিশহর থানার পলাশ চন্দ্র ঘোষ, পাহাড়তলী থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে বদলি করা হয়েছে। তবে বন্দর জোনের কাউকে বদলি করা হয়নি।

সিএমপি কমিশনারের আদেশে মধ্যে দক্ষিণ বিভাগের এসআই সজল দাশ, তারিকুজ্জামান, তন্ময় ভট্টাচার্য্যকে উত্তর বিভাগে, রেজোয়ানুল ইসলামকে পশ্চিম জোনে ও জামাল উদ্দিনকে বন্দর বিভাগে বদলি করা করা হয়েছে। উত্তর ও পশ্চিম বিভাগের ছয় এসআইকে দক্ষিণ বিভাগের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে।

সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডবলমুরিং থানার ঘটনার সাথে এই বদলির সম্পর্ক নেই। সেই ঘটনা তো আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটা করা হয়েছে, অনেকে একই থানায় কয়েক বছর ধরে আছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের অন্য থানায় দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’

এসআই বরখাস্ত ওসি শোকজ চট্টগ্রামে তরুণের লাশ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর