‘করোনা পরীক্ষায় কোনো সংকট নেই, কিট মজুদ ৩ লাখ’
২০ জুলাই ২০২০ ২০:০৪
ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় কোনো সংকট নেই। আর এ জন্য সরকারের হাতে প্রায় তিন লাখ কিট মজুদ আছে। প্রতিদিন ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হলে এ কিটে আরও এক মাস যাবে।
সোমবার (২০ জুলাই) সকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনলাইনভিত্তিক মিটিং প্ল্যাটফর্ম জুম’র মাধ্যমে ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র এক বিশেষ সভায় সভাপতির বক্তব্যে সচিব মো. আব্দুল মান্নান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এরপর আরও কিট আমদানির কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ১০ হাজার করে পরীক্ষা করতে থাকলে মজুদকৃত কিট দিয়ে আরও অন্তত একমাস চালানো যাবে। এর মধ্যে নিশ্চয়ই আরও কিছু কিট আমরা আমদানি করতে সক্ষম হব। সুতরাং দেশে করোনা পরীক্ষায় কোনো সংকট নেই। নিশ্চয়ই করোনা পরীক্ষা বৃদ্ধিতে আরো উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
আব্দুল মান্নান বলেন, ‘যুক্তরাজ্য, চীনসহ অনেক দেশই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের নিচে, সেসব দেশ এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাবে। যেহেতু বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার মার্কিন ডলারের কাছাকাছি, সুতরাং বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যেই পেয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেশে এলে দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে ক্রমান্বয়ে বিতরণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সেইসঙ্গে ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া ও বিতরণের জন্যও সরকার যথার্থ পদক্ষেপ নেবে।’
অনলাইন সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো ধরণের সমন্বয়হীনতা নেই। আমরা সবাই এখন একযোগে দেশ সেবায় কাজ করে যাচ্ছি।’
সভায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সেলান বলেন, ‘কোভিড হাসপাতালে অনেক বেড খালি পড়ে রয়েছে। রোগীরা কেন ভর্তি হচ্ছে না, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরিবার থেকে আলাদা করে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা গেলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এতে কম আক্রান্ত হবেন।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহীউদ্দিন সিএমএসডি’র পরিচালক ও অন্যান্য মহাপরিচালক পদে কোনো চিকিৎসক কর্মকর্তা রাখা প্রসঙ্গে তার মতামত ব্যক্ত করেন। সেইসঙ্গে তিনি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা আরও শক্তশালী হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোাপাল দত্ত বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে নন-কোভিড রোগীদের সেবা দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রশাসন বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্কাউটস ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে শক্তিশালী টিম গঠন করতে হবে।’
বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘দেশে বর্তমানে করোনা টেস্টের পরিমাণ কমে গেছে। করোনা মোকাবিলা করতে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।’ দেশে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতি করছে বলেও তিনি জানান।
সভার কার্যক্রম সঞ্চালনের দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এ সময় তিনি বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন। টেস্ট সংখ্যা বৃদ্ধি, বিমান বন্দরে কাস্টমসে জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশে শুল্ক ব্যবস্থা শিথিল, স্বাস্থ্য অধিদফতরে একজন জরুরি ফোকাল পয়েন্ট রাখা এবং সিএমএইচডি’তে জরুরি কাজের সহজ ম্যাকানিজম তৈরির ব্যাপারে পরামর্শ দেন ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বক্তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সভাপতির বক্তব্যে কমিটির সকলকে আশ্বস্ত করেন; যাতে তারা নতুন উদ্যোমে দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে দেশের পাশে থাকেন এবং নিয়মিত পরামর্শ দেন। জাতীয় পরামর্শক কমিটির সব পরামর্শ এখন থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং সেগুলো ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হবে বলেও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জানান।
সভায় সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) শেখ মুজিবর রহমানসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।