Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৮০ শতাংশ কিডনি রোগীর চিকিৎসা হয় না টাকার অভাবে


৮ মার্চ ২০১৮ ০৯:২৫

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল  করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশে বর্তমানে ৩ কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন যা কি-না মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশের একটু বেশি। এরমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের কারণে ৩৩ শতাংশ, ডায়াবেটিসের কারনে ৪১ শতাংশ, সংক্রমণজনিত কারণে ২৫ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে এক শতাংশ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোট রোগীর মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আসে মাত্র ২০ শতাংশ রোগী। বাকি ৮০ শতাংশ রোগীই টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেন।

বিজ্ঞাপন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবুল কাশেমের বয়স ৮৯ বছর। তিনি গত এক বছর ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। ডায়ালাইসিস হয়েছে দুইবার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আবুল কাশেমের মোট আটটি ডায়ালাইসিসের পর তার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আবুল কাশেমের ছেলে হাসান ইমাম বলেন, রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রথম যখন ডায়ালাইসিস করানো হয়, তখন দুইদিনে খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। আর বাকি সাতটি ডায়ালাইসিস করাতে কতো খরচ হবে সেটা নিয়েই চিন্তা করছি। তবে আবুল কাশেম ডায়ালাইসিস শুরু করতে পারলেও মোহাম্মদ হোসেন সেটি পারেননি।

মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মনির সারাবাংলাকে বলেন, বাবা ছিলেন সরকারি এক প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি। গত ছয় বছর ধরে তিনি কিডনি রোগে ভুগছে। প্রথমে কয়েক বছর ওষুধ খেলেও এখন তার ডায়ালাইসিস করানো প্রয়োজন। কিন্তু প্রথমে সঞ্চয়, পরে জায়গা-জমি বিক্রি করে চিকিৎসা চালানো হলেও এখন একেবারেই শূন্যহাত। তাই টাকার অভাবে ডায়ালাইসিস করানো সম্ভব হচ্ছে না।

জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ হঠাৎ করেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হন, আর ধীরে ধীরে আক্রান্ত হন ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ। ১৯৮২ সালে প্রথম দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে এ পর্যন্ত ৫০৫ জনের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি প্রতিস্থাপনে এখানে খরচ পড়ে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয় চিকিৎসার খরচসহ থাকা-খাওয়ার ও অন্যান্য খরচ।

বিজ্ঞাপন

কিডনি রোগীরা কেন দেশে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না, জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. শহীদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গ্রাম, শহরাঞ্চল, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অপ্রতুলতা রয়েছে, রয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির অভাব। যার কারণে প্রথমে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত না হবার কারণে তাদেরকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। আর যখন তারা উপযুক্ত চিকিৎসকের কাছে আসেন তখন অনেক ক্ষেত্রে কিছুই করার থাকে না। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ব্যাথানাশক ওষুধ অতিমাত্রায় খাবার ফলে আমরা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে থাকি বলেন অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম।

দেশে দিনকে দিন কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে এর মধ্যে বিস্ময়করভাবে বাড়ছে শিশু কিডনি রোগীর সংখ্যা। জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কিডনি ইনিস্টিটিউটসহ হাসপাতালগুলোতে শিশু কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু কিডনি রোগী রয়েছে। তারা বলছেন, ১৮ বছরের কম বয়সীদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হবার হার ৪৫ শতাংশের মতো।

শিশু কিডনি রোগীর সংখ্যা কেন বাড়ছে জানতে চাইলে জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মঈনুল খোকন সারাবাংলাকে বলেন, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, শারীরিক ব্যায়াম না করা, স্থূলতা, জাংক ফুডে আশক্তি এবং পুষ্টিকর খাবার না খাওয়াটাই শিশুদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হবার অন্যতম কারণ।

কিডনি রোগীরদের চিকিৎসা না করাতে পারার অন্যতম কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা কিডনি প্রতিস্থাপন জটিলতার কথাও উল্লেখ করেন। নাম প্রকামে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, আগে কিডনি প্রতিস্থাপনে কেবলমাত্র নির্ধারিত ১২ জনের কাছ থেকে কিডনি নেওয়া যেত। কিডনি প্রতিস্থাপন আইন সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও জটিলতা থেমে নেই। যার কারণে ইচ্ছে করলেও এই ১২ জনের বাইরে কেউ কিডনি দিতে পারছেন না। এ ধরনের সব জটিলতা দূর করতে হবে। নয়তো চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে রোগীরা।

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর