প্রতারণার শিকার: প্রতিকার চাইতে ভিয়েতনামে দূতাবাসে ৬২ বাংলাদেশি
২১ জুলাই ২০২০ ০২:২৮
ঢাকা: দালালের খপ্পরে পরে যথাযথ কাজ ও বেতন না পেয়ে প্রতিকারের আশায় দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে হাজির হয়েছেন ৬২ বাংলাদেশি। তাদের কারও কারও অভিযোগ সাত-আট মাস ধরে দালালরা তাদের কাজ না দিয়ে ভিয়েতনামের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়েছে। আর যারা কাজ পেয়েছেন, তারাও ঠিকমতো বেতন পান না। বেতন চাইতে গেলে তাদের ওপরে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ একাধিক বাংলাদেশির। তবে প্রতিকার চাইতে এসে দূতাবাস থেকেও তেমন সহায়তা মিলছে না বলেও অভিযোগ তাদের।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে জানা গেছে, ভিয়েতনামে যথাযথ কাজ ও বেতন না পাওয়ায় সোমবার (২০ জুলাই) ভোরে ১৭ বাংলাদেশি দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে হাজির হন। এর আগে রোববার একই অভিযোগে দূতাবাসে হাজির হয়েছিলেন ১২ জন। গত সপ্তাহে সেখানে গেছেন আরও ছয় জন। আর আগে থেকেই সেখানে আছেন আরও ২৭ বাংলাদেশি। সব মিলিয়ে ৬২ বাংলাদেশি এখন দূতাবাসে প্রতিকার চাইছেন।
দূতাবাসে উপস্থিত বাংলাদেশি কর্মী ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় অনলাইনে। তিনি বলেন, ভিয়েতনামের গুনতাও এলাকায় দীর্ঘ সাত মাস তাদের ঠিকমতো কাজ না দিয়ে, বেতন না দিয়ে দালালরা নানা জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়। প্রতিকারের আশায় দুই হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সোমবার ভোর ৪টায় হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে পৌঁছান তারা ১৭ জন। এখানে এমন কয়েকজনকেও পেয়েছেন যারা বেতন চেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে নরসংদির জাহাঙ্গীর আলম, ফেনীর আবু সায়েম, নোয়াখালীর নূর হোসেন, ময়মনসিংহের আব্দুল হক, শহিদুল ইসলাম ও মিলন মিয়া জানান, তারা ভোরে দূতাবাসে পৌঁছালেও ওই সময় দূতাবাস বন্ধ ছিল। বাধ্য হয়ে দূতাবাসের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নেন। পরে দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, সরকারি সব নিয়মকানুন মেনে জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়ে তারা ভিয়েতনামে এসেছিলেন। কিন্তু কাজ না দিয়ে তাদের সাপ্লাই এজেন্টের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রতারণা, নির্যাতন ও মানব পাচারের শিকার হয়ে এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তাদের তেমন কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না।
অভিবাসন আইনের ২৯-এর (১) উপধারায় বলা আছে, কোনো অভিবাসী কর্মী, বিশেষত বিদেশে আটক কিংবা আটকে পড়া বা বিপদগ্রস্ত কর্মীর দেশে ফিরে আসার এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন বা দূতাবাসের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়ার অধিকার থাকবে। তবে এ আইন অনুযায়ী দূতাবাস থেকে সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ প্রবাসীদের।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, জুলাই মাসের শুরুতে ভিয়েতনাম থেকে ১১ বাংলাদেশি ঢাকায় ফেরত আসেন। ওই সময়ই আমরা জানতে পারি, আরও অনেকেই এমন পরিণতির শিকার রয়েছেন এবং হচ্ছেন। গুনতাওসহ ভিয়েতনামের বিভিন্ন ক্যাম্পে শতাধিক বাংলাদেশি আছেন। এখন তো ৬২ বাংলাদেশি সহায়তার আশায় দূতাবাসে গিয়েছেন। সরকারের উচিত বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, যেন এমন ঘটনা না ঘটে। একইসঙ্গে তাদের ফিরিয়ে আনতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
৬২ বাংলাদেশি দালাল প্রতারণার শিকার প্রতিকার চেয়ে অবস্থান ভিয়েতনামে বাংলাদেশ দূতাবাস হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস