কলকাতার পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে জাহাজ, সড়কে যাবে ত্রিপুরা-আসাম
২১ জুলাই ২০২০ ১৪:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতের কলকাতা থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য পণ্যের প্রথম চালান নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে জাহাজ। পণ্যবাহী চারটি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের পর সড়কপথে যাবে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে।
মঙ্গলবার (২১ জুলাই) ভোরে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে এসে পৌঁছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া শিডিউল অনুযায়ী দুপুর একটার দিকে এমভি সেঁজুতি জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে এসে ভিড়েছে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক।
‘জাহাজ বন্দর সীমানায় আসার পরেই বন্দর-কাস্টমসের যে মাশুল প্রাপ্য সেটা ক্লিয়ার করা হয়েছে। এখন জাহাজটাকে জেটিতে ভালোভাবে সেট করে তারপর কনটেইনারগুলো খালাস শুরু হবে। আশা করছি, সন্ধ্যার আগেই খালাস শুরু হবে।’
সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানান, জাহাজটিতে মোট ২২১ কনটেইনার পণ্য এসেছে। এর মধ্যে চার কনটেইনার পণ্য ভারতের, যেগুলো খালাসের পর সড়কপথে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে ভারতে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশি জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট ম্যাঙ্গো শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, জাহাজটি গত ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দরে গিয়ে পৌঁছে। পরদিন সেটি কলকাতা বন্দরের জেটিতে বার্থিং নেয়। কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর থেকে ভারতের পণ্যবোঝাই চারটি কনটেইনার নিয়ে জাহাজ দেশটির হলদিয়া বন্দরে পৌঁছে শনিবার (১৮ জুলাই)। সেখানে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কনটেইনার তোলার পর রোববার রাতে সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়।
চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের চারটি কনটেইনারের দুটিতে রড এবং অপর দুটিতে ভোগ্যপণ্য ডাল আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে কনটেইনার চারটি খালাসের পর সরাসরি বাংলাদেশি প্রাইম মোভারের মাধ্যমে পৌঁছানো হবে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় আখাউড়া স্থলবন্দরে। সেখানে খালাসের পর রডের চালান নেওয়া হবে পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়ায়। চালানটি ভারতের এস এম করপোরেশনের। এছাড়া ডালের চালান নেওয়া হবে আসামের করিমগঞ্জে জেইন ট্রেডার্সের কাছে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ভারতীয় পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাতধরনের মাশুল আদায় করছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ভারতীয় পণ্যের প্রতি চালানের প্রসেসিং ফি বাবদ ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ ১০০ টাকা, এসকর্টের চার্জ ৫০ টাকা এবং বিবিধ প্রশাসনিক মাশুল ১০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কনটেইনার স্ক্যানিংয়ের জন্য ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিল ও লক নির্ধারিত আছে।
এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব মাশুল আছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রতি কনটেইনারে পাচ্ছে প্রায় ৫৫ মার্কিন ডলার। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত পরিবহন খরচও পাবে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনের চুক্তি হয়। ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠকে এ সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতি সই হয়।
এর নয় মাস পর আসা প্রথম চালানের ওপর নির্ভর করছে এই ট্রান্সশিপমেন্ট পদ্ধতিতে পণ্য পরিবহনে ভারতের ব্যবসায়ীরা আগ্রহী কি না। তবে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।