গবেষণার সুযোগই পাবেন না রাবির একহাজার শিক্ষক
২২ জুলাই ২০২০ ০৮:২৮
রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গবেষণা খাতে বরাদ্দ মাত্র ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। বরাদ্দকৃত এই অর্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চতুর্থাংশেরও কম শিক্ষককে গবেষণায় বরাদ্দ দিতে পারবে প্রশাসন। আর এতে এই শিক্ষাবর্ষে বরাদ্দ পাবেন না একহাজারের বেশি শিক্ষক।
অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক আফসার আলী জানান, এবছর ৬০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দসহ গবেষণায় মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা-০২ এর পরিচালক আখতার হোসেন জানান, মূলত একক ও যৌথ প্রকল্প এই দুইভাবে গবেষণায় বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। এর মধ্যে একক প্রকল্পে দুই লাখ টাকা এবং যৌথ প্রকল্পে ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প প্রতি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাবেন একজন গবেষক। এই হিসাবে ৫ কোটি টাকার বরাদ্দে মোট ২৫০ শিক্ষক গবেষণা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে মোট শিক্ষকের পরিমাণ ১ হাজার ২৬০ জন। অতএব একহাজারেরও বেশি শিক্ষককে গবেষণায় বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে না।
শিক্ষকরা বলছেন, গবেষণায় বরাদ্দ না পাওয়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে অনেক বিশেষায়িত গবেষণা। গবেষণায় আগ্রহ কমার পেছনেও ভূমিকা রাখছে এটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আকতার বানু বলেন, ‘প্রতিবারই শিক্ষক সংখ্যার তুলনায় অনেক কম বরাদ্দ আসে। এ কারণে অনেকের আগ্রহ থাকলেও গবেষণায় ভূমিকা রাখতে পারেন না। এটি শিক্ষকদের গবেষণায় অনাগ্রহের একটি কারণ।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ত্রিশ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী, হাজারেরও বেশি শিক্ষকের জন্য এই গবেষণা বরাদ্দ একাবারেই নগণ্য। অথচ জ্ঞান সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। করোনাসৃষ্ট পরিস্থিতিতে আশংকা করা হয়েছিলো পশ্চিমা দেশগুলো গবেষণায় বরাদ্দ কমিয়ে দেবে। তবে দেখা গেছে তারা এই পরিস্থিতিতেও গবেষণায় বরাদ্দ পূর্বের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ তারা বুঝতে পেরেছেন করোনার মতো এসব দুর্যোগ ঠেকাতে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের বিকল্প নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা-০২ সূত্র বলছে, বরাদ্দ হওয়া অর্থগুলো অনুষদভিত্তিক ভাগ করে দেয় একাডেমিক শাখা। অনুষদের শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অর্থগুলো বণ্টন করা হয়।
অনুষদগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দ কম হওয়ায় প্রকল্প জমা দেওয়া ও আবেদনে আগ্রহ দেখান না শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকরা প্রকল্পের জন্য আবেদন করলে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রকল্পগুলোতেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিদেশি প্রকল্পগুলোতে বড় ফান্ড বরাদ্দ থাকায় শিক্ষকরা ওগুলোতেই কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। দেশীয় গবেষণা প্রকল্পগুলোতে স্বল্প বাজেটের জন্য অনেক শিক্ষকই আগ্রহবোধ করেন না।’
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪৩২ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকার বাজেট পাশ হয়।