দুদকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি পাপুলের স্ত্রী-শ্যালিকা
২২ জুলাই ২০২০ ১৫:৪৪
ঢাকা: কুয়েতে মানব পাচারের অভিযোগে আটক হওয়া ও লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিমা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন।
দুদকের নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, পাপুলের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুদকের কর্মকর্তারা যেসব তথ্য চান তার বেশির ভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেননি তারা। এমনকি এসব তথ্যের উত্তর দিতে এবং তথ্য প্রমাণাদি দিতে এসময় দুদক কর্মকর্তাদের কাছে সময় চান তারা। এমনকি বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর ছিল নীরব।
এর আগে রোববার (১২ জুলাই) দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন তাদেরকে তলব করে দুদকে হাজির হতে বলেন। যার ধারাবাহিকতায় তারা আজকে কমিশনে হাজির হন।
দুদক থেকে পাঠানো তলবি নোটিশে বলা হয়, পাপুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গ্রাহককে লোন বরাদ্দ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মানিলন্ডারিং করে বিদেশে পাচার এবং শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বিষয়ে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এদিকে পাপুলের যাবতীয় ব্যাংক একাউন্ট এবং তার কোম্পানির লেনদেনের যাবতীয় তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুদক। একইসঙ্গে পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক লেনদেন ফ্রিজ (স্থগিত) করতেও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) জানিয়েছে দুদক। একইসঙ্গে পাপুলকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং অন্যান্য বিষয়ে কী করা হবে সেটার বিষয়েও দুদকে আলোচনা চলছে। দ্রুতই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থায় যাবে দুদক বলে জানা গেছে।
অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির হিসাব জব্দ হয়েছে। এর মধ্যে মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি টাকায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা রয়েছে বলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের বরাতে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার হন। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের কুয়েতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতিও রয়েছে। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন।
অপরদিকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ১৭ জুন মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েত পুলিশের হাতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের চার সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখাকে (এসবি) চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উপায়ে শত শত কোটি টাকা অর্জন করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য একজন কর্মকর্তাও নিয়োগ দেন। দুদকে পাপুলের বিরুদ্ধে ১৭৪ পাতার অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। সেই অভিযোগে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এই পরিচালক বিদেশে ব্যবসার আড়ালে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। এর মধ্যে তিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে ২৮০ কোটি টাকা হুন্ডি ও বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পাচার করেছেন। এ টাকার মধ্যে তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মতিঝিল শাখার একটি হিসাবের মাধ্যমে ১৩২ কোটি টাকা ও প্রাইম ব্যাংকের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা পাচার করেন। ইউসিবিএলের মাধ্যমে ১০ কোটি ও প্রাইম ব্যাংকে ঋণ সৃষ্টি করে ১০ কোটি টাকা পাচার করেন। বাকি টাকা পাপুল তার শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং জেডডব্লিউ লীলাবালি নামক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করেন। কয়েকজন ব্যাংক মালিক অর্থপাচারে পাপুলকে সহযোগিতা করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে আরও বলা হয়, ৫০ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন পাপুল। আর স্ত্রীর নামে একই ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকার শেয়ার কিনে অংশীদার হয়েছেন। গুলশান-১ এর ১৬ নম্বর সড়কে গাউসিয়া ডেভেলপমেন্টের প্রকল্পে মেয়ে ও স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এর পিংক সিটির পেছনে গাউসিয়া ইসলামিয়া প্রকল্পে স্ত্রীর নামে ৯ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, স্ত্রী ও নিজের নামে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৯১ কোটি টাকার সম্পদ আছে। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের ঢাকার ওয়েজ আর্নার্স শাখায় স্ত্রীর নামে ৫০ কোটি টাকার ওয়েজ আর্নার্স বন্ড ও মেয়ের নামে ২০ কোটি টাকার বন্ড আছে। শ্যালিকার নামে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনে নিজে ব্যবহার করছেন। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে নিজ নামে ৪০ কোটি, মেয়ের নামে ১০ কোটি ও স্ত্রীর নামে ২০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্ত্রীর নামে একটি ছয়তলা বাড়ি আছে। এছাড়া শ্যালিকার নাম ব্যবহার করে দিগন্ত মিডিয়ার বেনামে পরিচালক ছিলেন পাপুল। ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর সঙ্গে তার বিপুল পরিমাণ ব্যবসা ছিল। মীর কাশেম আলীর ফাঁসি হওয়ার পর পাপুল তার বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ব্যাংক পরিচালক হয়েও বেআইনিভাবে ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ১ হাজার দুশ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু করে চার পরিচালক বোর্ড সভায় অনুমতি ছাড়া ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা ভোগ করেছেন। এই ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে পাপলু রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে পাথর সরবরাহের ব্যবসা করেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।
কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল দুদক পাপুল সংরক্ষিম নারী এমপি সেলিমা ইসলাম স্ত্রী-শালিকা