করোনায় জর্জরিত বিএনপি: মৃত ৭৮, আক্রান্ত ২৩২
২২ জুলাই ২০২০ ১৮:১০
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশের ১৭ দিন পর গত ২৫ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘সাময়িক মুক্তি’ পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজা’য় যান। দলীয় প্রধানের সাময়িক মুক্তিতে বাধভাঙ্গা আনন্দে-আবেগে মেতে ওঠেন দলের নেতাকর্মী, সমর্থকেরা। করোনা ঝুঁকি পাত্তা না দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর অনুসরণ করে বাসা পর্যন্ত যান কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক। তখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা ছিল কম। তারপরও খালেদা জিয়ার মুক্তিকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাগম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেননা তখন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম থাকলেও করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ছিল অনেক বেশি।
এখন আক্রান্ত ও মৃতের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় অনেকটা কমে গেছে। সে কারণেই হয়তো গত ১৬ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির দুই দায়িত্বশীল নেতা রুহুল কবির রিজভী ও হাবীব-উন-নবী খান সোহেল কয়েক হাজার নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে গায়ে গায়ে মিশে মানববন্ধন করলেও তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি।
কেবল খালেদা জিয়ার মুক্তিকে কেন্দ্র করে সেদিনের সেই শো-ডাউন বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে আয়োজিত ওই মানববন্ধন-ই নয়, নানা ইস্যুতেই রাজধানী ঢাকায় মাঝে মধ্যেই জড়ো হচ্ছেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা। করোনাকালে সেবামূলক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ কর্মসূচির অগ্রভাগে থাকছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
অনেক সময় দেখা যায়, এসব কর্মসূচি পালনকালে স্বাস্থ্যবিধি খুব একটা মানা হয় না। প্রথম দিকে দলটির নেতাকর্মীরা পিপিই পরলেও এখন কেবল মাস্কেই সীমাবদ্ধ থাকছেন। দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবকর্মীরাই কর্মসূচির সামনের সারিতে। এর মূল্যও দিতে হচ্ছে তাদেরকে।
করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে গঠিত ‘জাতীয় পর্যবেক্ষণ সেল’র দেওয়া তথ্যমতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২১ জুলাই) পর্যন্ত বিএনপির ৭৮ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ২৩২ জন।
মৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতা হলেন— বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হক। গত ৩ জুলাই তিনি মারা যান। এর আগে গত ৮ জুন মারা যান ঢাকা উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। সর্বশেষ সোমবার (২০ জুলাই) মারা যান বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লাহ বিভাগ) মো. আব্দুল আউয়াল খান।
এ ছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ মে মারা যান। সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানের ছোট ভাই এশিয়ান সার্ভেয়ার্স লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ফয়জুর রহমান মারা যান গত ২৮ জুন। বাকি ৭৩ জন দলের হাই প্রোফাইল নেতা না হলেও করোনাকালে মাঠের সেবামূলক কর্মসূচিতে সামনের সারিতে ছিলেন— এমনটিই বলছে বিএনপির করোনা পর্যবেক্ষণ সেল।
আক্রান্ত ২৩২ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাইপ্রোফাইল নেতা রয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসউইং সদস্য শায়রুল কবির খান সারাবাংলাকে জানান, খালেদা জিয়ার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর এনামুল হক করোনা আক্রান্ত হয়ে এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ স্ত্রী, কন্যা, পুত্রসহ করোনা আক্রান্ত। তারা বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ খৈয়ম ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
তবে এখন পর্যন্ত নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় এবং বিএনপির করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের কেউ আক্রান্ত হননি বলে জানিয়েছেন শায়রুল কবির খান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে মহামারির মধ্যেও বিএনপিকে মাঠে থাকতে হচ্ছে, বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হচ্ছে। তাই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিএনপি নেতাকর্মীরা দলের নির্ধারিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে গিয়ে অনেকেই মারা গেছেন, বিপুলসংখ্যক লোক আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত গুলশান-নয়াপল্টন অফিস এবং করোনা পর্যবেক্ষণ সেলের কেউ আক্রান্ত হননি।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংকটে সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই বিএনপিকে মাঠে থাকতে হচ্ছে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমাদের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যুবরণ করছেন। দলের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেবামূলক কর্মকাণ্ডে শরিক হতে হবে। নিজে নিরাপদ থাকা এবং অন্যকে নিরাপদ রাখাটা বেশি জরুরি।’
উল্লেখ, করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ এবং হাইকমাণ্ডে অবহতি করার জন্য গত ৫ মে ‘করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেল’ গঠন করে বিএনপি। এ সেলের উপদেষ্টা করা হয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। আর আহ্বায়ক করা হয় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে।
সেলের অন্য সদস্যরা হলেন— দলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন অর রশীদ, ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুস সালাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।
সেলের উল্লেখিত সদস্যদের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে কয়েকদিন পর পর মিডিয়াতে ভার্চুয়াল ব্রিফিং করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি ‘করোনা জর্জরিত বিএনপি’র চিত্রটিও ফুটে উঠছে।
করোনাভাইরাস করোনায় আক্রান্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কোভিড-১৯ জাতীয় পর্যবেক্ষণ সেল বিএনপি বিএনপি নেতাকর্মী