উপহারের নামে ৬ কোটি টাকা লোপাট, ১২ নাইজেরিয়ান গ্রেফতার
২২ জুলাই ২০২০ ২২:০১
ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুত্বের পর দামি উপহার দেওয়ার নামে প্রতারণা করে গত কয়েক মাসে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানের পর রাজধানীর পল্লবী থেকে এক বাংলাদেশি নারী ও নাইজেরিয়ার ১২ নাগরিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বুধবার (২২ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার। এ সময় প্রতারকচক্রের কাছ থেকে পাঁচটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন মডেলের ১৪টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন এবং অসংখ্য সিম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার বাংলাদেশির নাম রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন।
শেখ মো. রেজাউল হায়দার বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতদের প্রতারণার শিকার হয়ে একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা অভিনব কায়দায় বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করে। বন্ধুত্বের একপর্যায়ে তারা একটি মেসেঞ্জার থেকে একটি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেন। পরে মেসেঞ্জারে এ সব মূল্যবান সামগ্রীর এয়ারলাইন বুকিংয়ে ডকুমেন্ট পাঠায়। এরপর এ সব উপহারের বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলেও ভুক্তভোগীকে জানায়। তারা ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টমস গুদাম থেকে রিসিভ করতে বলে।’
এ সময় তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাহাত আরা খামন ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে বলে। তারা এ টাকা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। তাদের পাঠানো উপহার সংগ্রহ না করলে তাদের আইনি জটিলতার ভয় দেখায় প্রতারক চক্রটি।
সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ফলে ভুক্তভোগী তাদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা জমা দেন। একইভাবে গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে দুইমাসের মধ্যে শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’
গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছেন। তাদের বাংলাদেশে অবস্থানের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছে সিআইডি।
জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘বাড়ির মালিকেরা কোনো বিদেশি নাগরিককে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে তাদের বৈধ কাগজপত্র পাসপোর্ট যাচাই করে বাড়িভাড়া দেবেন। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগে অপরিচিত ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করা থেকে বিরত থাকবেন। প্রতিবেশী বা এলাকায় কোনো বিদেশি ব্যক্তি ভাড়া নিলে বা সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেবেন। কেউ যদি টেলিফোনে বা ফেসবুকে এ ধরনের উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয়, তাহলে পুলিশকে জানাবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতেমা এবং অর্গানাইজড ক্রাইমের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক।