কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি, ভাঙ্গন ঝুঁকিতে ২০ গ্রাম
২৩ জুলাই ২০২০ ০০:০৪
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি জীবনযাপন করছে অন্তত ৪ লাখ মানুষ। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে আছে ২০ গ্রাম।
তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়ির হাট এলাকায় ক্রসবারের মাটি ৫০ মিটার পানিতে ভেসে গেছে। ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিরাম এলাকার ক্রসবারেও। এতে ইউনিয়ন দুটির প্রায় ২০টি গ্রাম ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়েছে। গত ৫ দিন ধরে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই দুই নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় আড়াই শতাধিক চরের ৩ লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘ ২৮ দিন ধরে নৌকায় ও ঘরের ভেতর পানির মধ্যে বসবাস করছে। এ অবস্থায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ত্রাণের অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষ। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বন্যাদুর্গতরা। স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের। চরাঞ্চলের চারনভূমিগুলো দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় গৃহপালিত পশুর খাদ্য সংকট দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগন্ধস ইউনিয়নের মশালের চরের আকছেদ আলী ও রোজিনা বেগম জানান, ‘প্রায় এক মাস ধরে পানির ওপর বসবাস করছি। প্রতিদিন ভাবছি পানি কমবে কিন্ত কোন উন্নতি হয় না। এ পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাইনি। ঘরের খাবারও শেষ হয়ে গেছে। অন্যের কাছে ধার করে সামান্য কিছু খাবার এনে এক বেলা খেয়ে দিন পার করছি।’
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আইয়ুব আলী সরকার জানান, ‘আমার ইউনিয়নের ২৫শ পরিবারের সবাই প্রায় ১ মাস ধরে পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১০৫০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া সম্ভব হয়েছে।’
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলার বন্যাদুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং বিতরণ করা হয়েছে। আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বন্যা কবলিত পরিবারগুলো ভিজিএফ’র ১০ কেজি করে চাল পাবে।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩ টা থেকে বুধবার বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট ও রতিরাম এলাকার ক্রসবার রক্ষা চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।