সর্বত্র মাস্ক ব্যবহার পরিপত্র প্রত্যাহার চেয়ে আইনি নোটিশ
২২ জুলাই ২০২০ ২৩:০৬
ঢাকা: করোনা থেকে রক্ষায় সর্বত্র মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্র প্রত্যাহার চেয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২২ জুলাই) রাজধানীর আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার ডা. মুহম্মদ আব্দুল আলী মারুফের পক্ষে আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশ পাঠিয়েছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে প্রতিটি কর্মস্থলে কর্মরত ব্যক্তি এবং জনসমাবেশ চলাকালীন আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিপত্রের বিষয়ে নোটিশে দাবি করা হয়, ‘এমন ঢালাওভাবে মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা কোনোক্রমেই বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত কোনো পদক্ষেপ নয়। ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ আইওয়া’স কলেজ অব মেডিসিন’-এর মেডিসিন ও এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ এলি পেরেনচেভিচ বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যদি পাশের বাড়িতেও থাকে তারপরও আপনার মাস্ক ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। একজন সুস্থ মানুষের মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি নয়, উচিতও নয়।’
‘ঢালাওভাবে মাস্ক ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানিয়েছে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি জানিয়েছে, মুখে মাস্ক পরে শরীরচর্চা, প্রাতঃভ্রমণ বা জগিং করলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। এ অবস্থায় অক্সিজেন কমে গিয়ে উল্টো তা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।’
‘সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, বেশি সময় ধরে মাস্ক ব্যবহারের ফলে অনেকের নাক-মুখে ছোট লালচে ও গোলাপি ব্রন, র্যাশ উঁকি দিচ্ছে। খসখসে ত্বক, চুলকানি, ঠোঁটের চারপাশে লাল লাল গুটির মতো দাগ হচ্ছে। যারা বয়ঃসন্ধিতেও ব্রনের সমস্যায় ভোগেননি, তারাও মাস্ক ব্যবহারের ফলে সমস্যায় পড়েছেন। ডারমাটোলজিস্টরা এই মাস্কঘটিত ব্রনের নাম দিয়েছেন ‘মাস্কনে’, অর্থাৎ মাস্কের কারণে যে ব্রন বা অ্যাকনে।’
এ কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত পরিপত্রটি সুস্পষ্টভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার বিপরীত।
‘পরিপত্রের নির্দেশনাসমূহ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সকল শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিক, হকার, রিকশা ও ভ্যান চালকদের জন্য মাস্ক পরিধান গুরুতর স্বাস্থ্যগত সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অত্যাধিক দৈহিক পরিশ্রমযুক্ত ভারি কাজের সময় মাস্ক না পরতে। অথচ আপনি বাংলাদেশের পরিশ্রমী শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যান চালকদেরকে মাস্ক পরিধানে বাধ্য করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তাই এই নোটিশ পাওয়ার ৩ কার্যদিবসের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত পরিপত্রটি প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।