জলাবদ্ধতা নিয়ে পাউবো-ওয়াসার তথ্যের সঙ্গে সরেজমিনের মিল নেই!
২৩ জুলাই ২০২০ ০০:৪৩
ঢাকা: রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও ঢাকা ওয়াসার দেওয়া তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। দুই সিটির বক্তব্য, জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয় না। স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সামনে চারটি সেবা সংস্থাই জলাবদ্ধতা নিয়ে একে অন্যকে দোষারোপ করেছে। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী নিজেই সরেজমিনে জলাবদ্ধতার চিত্র পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন। তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি পাম্প হাউজ ও খাল পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, পাউবো ও ঢাকা ওয়াসার দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবচিত্রের মিল নেই! এমন পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তব পরিস্থিতি ও সেবা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বিবেচনায় কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
বুধবার (২২ জুলাই) রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন দফতর ও বিভাগ থেকে নেওয়া কার্যক্রম পর্যালোচনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে অনলাইনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাজধানীতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ডাকা জরুরি সভায় পাউবো ও ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম তুলে ধরা হয় মন্ত্রীর কাছে। তবে এই দুই সংস্থার দেওয়া তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়— এমন দাবি তোলেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা।
আরও পড়ুন- বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, খাল পুনরুদ্ধারে শত কোটি টাকা জলে
সভায় ঢাকা ওয়াসা ও পাউবো জানায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বাভাবিক উপায়ে পানি বের করতে না পারায় পাম্পিং করে পানি বের করে দেওয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, পাম্পিং হাউজগুলো সম্পূর্ণ কার্যকর নয়।
সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পারিক দোষারোপ আর বাগবিতণ্ডার মধ্যেই বাস্তব চিত্র নিজেই দেখার সিদ্ধান্ত নেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সভা শেষে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিক পাম্প হাউজ সরেজমিনে পরিদর্শনে বের হন মন্ত্রী। এসময় তিনি ডিএসসিসি’র অধীন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালুনগর পাম্প হাউজ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বালুরঘাট এলাকার খাল পরিদর্শন করেন। পরে, সোনারগাঁও হোটেলের পাশে হাতিরঝিলের স্লুইজ গেট ও মিরপুর বেড়িবাঁধে অবস্থিত গোড়ানচটবাড়ি পাম্প হাউজ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, তার সঙ্গে সরেজমিনে পরিদর্শনে পাওয়া তথ্যের আশানুরূপ মিল পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন- জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসা ও পাউবো চরমভাবে ব্যর্থ: ডিএসসিসি মেয়র
ঢাকা নগরীতে জলাবদ্ধতা আগের তুলনায় অনেক কমেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এখনো কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে, সেই সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করার লক্ষ্যেই তিনি সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছেন।
মন্ত্রী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য যেসব দফতর, বিভাগসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত আছে, তারা সবাই সমন্বয় করে কাজ করছে। তা সত্ত্বেও কেন রাজধানীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে, তা দেখতেই সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছি। তবে করানোভাইরাসের কারণে বর্ষা মৌসুমের আগে খাল ও জলাশয় পরিষ্কার কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। এ জন্য আমরা আশানুরূপ কাজ করতে পারিনি।
ঢাকার খাল ও জলাশয়গুলোর দেখভালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়।
এ সময় ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ডিএসসিসি’র অধীন খাল ও জলাশয়গুলো তাদের দায়িত্বে দিলে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করবেন।
এর আগে, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুই সিটি করপোরেশনসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনলাইনে জুম মিটিং শেষে সাংবাদিকদের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, নগরীতে চলমান জলাবদ্ধতা বছরের পর বছর চলতে পারে না। খুব দ্রুত এর সমাধান করতে হবে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করছে তার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতর। এ লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জলাবদ্ধতা জলাবদ্ধতা নিরসন ঢাকা ওয়াসা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন তাজুল ইসলাম পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় সরকারমন্ত্রী