ঢাকা-৫, ১৮ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছেড়ে দেবে না বিএনপি
২৩ জুলাই ২০২০ ১৩:০২
ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যশোর-৬ ও বগুড়া-১ উপনির্বাচনে অংশ না নিলেও ঢাকা-৫ ও ১৮ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছেড়ে দেবে না বিএনপি। আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যের মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হওয়া আসন দু’টিতে লড়বে তারা। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তোলার লক্ষ্য রয়েছে দলটির। উপনির্বাচন হওয়ায় নির্বাচন ‘ফেয়ার’ হবে— এমন মনোভাবও কাজ করছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লা। ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি নবীউল্লাহ নবী। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন হাবিবুর রহমান মোল্লা। গত ৫ মে বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়। শূন্য ঘোষণা করা হয় ঢাকা-৫ নির্বাচনি আসন।
অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন। ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জেএসডির নেতা শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন সাহারা খাতুন। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১০ জুলাই তার মৃত্যু হয়। শূন্য ঘোষণা করা হয় ঢাকা-১৮ নির্বাচনি আসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ঢাকার এই দুই গুরুত্বপূর্ণ আসনে একই দিনে ভোটগ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২০ আগস্টের পর যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ভোট হতে পারে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে।
দলীয় সূত্রমতে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঢাকার দুই উপনির্বাচনেও নিজেদের সক্ষমতার জানান দিতে চায় বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, নির্বাচন ‘ফেয়ার’ হলে জয় তাদের সুনিশ্চিত! আবার ‘ফেয়ার’ না হলে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের বীতশ্রদ্ধ মনোভাব আরেক দফা বাড়বে।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভোট— এমনটি ধরে নিয়েই বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ততদিনে হয়তো করোনাভাইরাসের তীব্রতা কমে যেতে পারে। আর যদি নাও কমে, তাহলে ভার্চুয়াল সভা-সেমিনারের মাধ্যমে নির্বাচনের মাঠ চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করা যাবে। কারণ, ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ প্রবেশমুখের এই দু’টি আসন রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ দু’টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনে অংশ নিলে করোনাকালে স্থবির হয়ে যাওয়া সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা হলেও গতি লাভ করবে। সিটি নির্বাচনে তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনকে নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে ভোট উৎসবে মেতে উঠেছিল, তেমনিভাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি আসনের উপনির্বাচনেও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে।
সূত্রগুলো বলছে, শুধু অংশগ্রহণই নয়, জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। তাদের মতে, এই দুইটি আসনে জিততে না পারলে ক্ষমতা হারাতে হবে— এমনটি নয়। সেই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ‘ফেয়ার নির্বাচন’ও দিয়ে দিতে পারে। আর ‘ফেয়ার’ নির্বাচন হলে বিএনপির জয় খুব একটা বেশি কঠিন হবে না। এ রকম হিসাব-নিকাশ থেকেই দুইটি আসনে একাধিক আগ্রহী প্রার্থী ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, এ্কাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী উপনির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারও উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী। দলের হাউকমান্ড থেকে গ্রিন সিগনাল পেলেই মাঠে নেমে পড়বেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কাজী আবুল বাসার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যে জনমর্থন, তাতে ঢাকার যেকোনো আসনে ধানের শীষ প্রতীকে কেউ দাঁড়ালেই তার জয় সুনিশ্চিত। প্রয়োজন শুধু মোটামুটি নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন।’
‘আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু জোট প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি নির্বাচন করতে পারিনি। উপনির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করব। আর আমাকে না দিয়ে যদি নবী উল্লাহ নবীকে দেয়, তাহলে তার হয়ে কাজ করব,’— বলেন কাজী আবুল বাশার।
এদিকে, গত নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ঐক্যজোটের প্রার্থী জেএসডির শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন উপনির্বাচনের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন। তবে এ আসনে নির্বাচন করার জন্য একাধিক আগ্রহী প্রার্থী রয়েছে বিএনপির।
তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মো. বাহাউদ্দিন সাদী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন রয়েছেন আলোচনায়। গত নির্বাচনে এই তিন জই দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। জেএসডি নেতা শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপনকে মনোনয়ন দেওয়ায় তারা কেউ প্রার্থী হতে পারেননি।
এম কফিল উদ্দিন আহমেদ বুধবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখন কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়েই কথা বলছিলাম। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের অনুকুলে না থাকলেও জনসমর্থন আমাদের দিকেই রয়েছে। সেটিকে কাজে লাগিয়ে উপনির্বাচনে জেতার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। ঢাকার দুইটি আসন হাতছাড়া হলে সরকারের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। সে কারণেই আমরা বিশ্বাস করি, উপনির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আর নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে আমরা জিতব।’
‘আমি উত্তরার আদিবাসী। এখানেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। গত ৩২ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে আছি। দল যদি উপনির্বাচনে অংশ নেয় এবং আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী,’— বলেন এম কফিল উদ্দীন আহমেদ।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’