করোনার ভুয়া সনদে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত: বিএনপি
২৩ জুলাই ২০২০ ১৩:৪৮
ঢাকা: করোনার ভুয়া সনদে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগে করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে উত্তরার বাসায় আয়োজিত ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির এই চরম মানবিক বিপর্যয়ের সময়ও দেশব্যাপী স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি আরও চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যখন করোনা টেস্টের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট প্রতারক মহল কর্তৃক ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদানের লোমহর্ষক কাহিনি উন্মোচিত হলো।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল এবং আরিফ-সাবরিনার জেকেজি হাসপাতাল পরীক্ষা না করেই মানুষকে, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে হাজার হাজার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে, তাতে একদিকে যেমন সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে পড়েছে গোটা জাতি, অন্যদিকে বিশ্ব দরবারে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং জাতি হিসেবে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।’
করোনার ভুয়া নেগেটিভ সনদের কারণে কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি যাত্রীরা সংকটে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিমানবন্দর পার হয়ে যাওয়া কিছু যাত্রীর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা নিষিদ্ধ করেছে। এ পর্যন্ত সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলোর মধ্যে আছে ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা থেকে বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণাটি কেবল প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যাই নয়, এর সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রত্যেক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। এই বিষয়টিও দারুণভাবে নেতিবাচক প্রভাবে পড়বে।’
তাছাড়া করোনার আগে উড়োজাহাজ ভর্তি করে যারা বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন, তাদের অনেকেরই ফিরে আসার ব্যাপারটি বাংলাদেশের করোনা ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। পর্যটন খাত পুনরুজ্জীবন, বিকাশ কিংবা বিদেশে শ্রম বাজার আরও সম্প্রসারণের সঙ্গেও এ বিষয়ের একটি যোগসূত্র রয়েছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের ভয়ে সব দেশই কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশ্বের বহু দেশ নেতৃত্ব ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো- বাংলাদেশ সেটা পারেনি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরীক্ষার ভুয়া সনদকে কেন্দ্র করে ইতালির প্রথম সারির গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে প্রবাসীরা ইতালিতে গেছেন। তাদের সবার কাছে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ছিল। ইতালির বিমানবন্দরের পরীক্ষায় পজিটিভ আসার পর তারা স্বীকার করেন, ঢাকা থেকে টাকা দিয়ে করোনা নেগেটিভ সনদ সংগ্রহ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘কাগজ-পত্রহীনদের বৈধতার সুযোগ দিতে যাচ্ছিল ইতালি সরকার। বাংলাদেশিদের জন্যে সেই সুযোগ কতটা কার্যকর থাকবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। ইতালিতে যে সকল বাংলাদেশি অভিবাসী অবস্থান করছেন, করোনামুক্ত সার্টিফিকেট ছাড়া তারা কাজে যোগ দিতে পারছেন না। প্রবাসী শ্রমিক ও বাংলাদেশি অভিবাসীরা রয়েছেন মহাসংকটে। সবকিছু মিলিয়ে ইউরোপে বাংলাদেশিদের অন্যতম আশ্রয়ের দেশ ইতালি ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বিমান চলাচল বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে তা চালু হলেও শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমান ও আমাদের সবুজ পাসপোর্টের মান মর্যাদার বিষয়টিও এখন এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের করোনা টেস্টের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইয়ার মার্কড হাসপাতালগুলোর মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতাল ছিল অন্যতম। একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় করোনা সংক্রমণে জীবনহানির যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, সেটিকে আমলে নিয়ে দলে দলে ঢাকা ছাড়ে বিদেশি কূটনীতকরা। তার সঙ্গে যোগ হয় ভুয়া হাসপাতালকে কূটনীতিকদের টেস্টের জন্য ডেডিকেটেড করা। এটাকেও কূটনৈতিকদের চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা আমজনতা না জানলেও কূটনীতিকরা ঠিকই খবর নিয়েছে রিজেন্টের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে।’
ভুয়া টেস্ট, ভুয়া সার্টিফিকেট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘টেস্ট না করেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট প্রদানকারীদের হোতা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ এবং জেকেজি’র ডাক্তার সাবরিনার প্রতারণার কাহিনি ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছে। প্রশ্ন হলো ২০১৪ সাল থেকেই রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স অবৈধ জানার পরও হাসপাতালটিতে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসার জন্য সরকার কীভাবে চুক্তি করল?’
তিনি বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিবসহ কয়েকজন সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকার প্রটোকল নেই। প্রটোকল ভেঙে এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উপস্থিতি এবং অনুষ্ঠানটির ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বহুল প্রচার প্রমাণ করে এ কু-কর্মের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই জড়িত।’