স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. আমিনুল ওএসডি
২৩ জুলাই ২০২০ ১৫:১১
ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসানকে ওএসডি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব (পার-২) মো. আবু রায়হানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে ডা. আমিনুল হাসানের জায়গায় চলতি দায়িত্ব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (এমবিডিসি) ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়াকে।
এর আগে গত ১২ জুলাই সারাবাংলায় ‘রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি: অভিযোগের আঙুল অধিদফতরের পরিচালকের দিকে’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে ১২ জুলাই পর্যন্ত রিজেন্ট হাসপাতাল বিষয়ক স্বাস্থ্য অধিদফতরের সব চিঠির উল্লেখ ছিল। অথচ এমন চিঠি পাওয়া গেছে যা ওই সময়ের আগের, যদিও তার সন্ধান আগে কখনো পাওয়া যায়নি। এসব চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলেও ডা. আমিনুল কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর এপ্রিল ও জুন মাসের তারিখ উল্লেখ করে একাধিক চিঠি ইস্যু করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে। ডা. আমিনুল হাসানের সই করা এই চিঠিগুলোর একটিতে লাইসেন্স নবায়ন বিষয়ে রিজেন্ট হাসপাতালকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান বরাবর লেখা আরেক চিঠিতে কোভিড রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তবে দুটি চিঠির কোনোটিরই স্মারক নম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র সংরক্ষণ শাখায় অন্তর্ভুক্ত নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নিজেকে ‘বাঁচানোর জন্য’ আমিনুল হাসান পরে কোনো একসময় চিঠিগুলো বানিয়ে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি: অভিযোগের আঙুল অধিদফতরের পরিচালকের দিকে’
‘রিজেন্ট কাণ্ডে ‘বাঁচতে’ নকল চিঠি বানিয়েছেন অধিদফতরের পরিচালক’- এই শিরোনামেও পরবর্তীতে রিপোর্ট প্রকাশ করে সারাবাংলা। অনুসন্ধানে জানা যায়, যেকোনো সরকারি চিঠি আদান-প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের নথিপত্র সংরক্ষণ বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানে নির্ধারিত বইয়ে চিঠির স্মারক নম্বর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর, সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুলের সই করা এই দুই চিঠির স্মারক নম্বরের কোনো রেকর্ড নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নথিপত্র সংরক্ষণ শাখায়।
চিঠির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বয় বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, তিনি অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগ থেকে এমন কোনো মেইল বা চিঠি পাননি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায়, এসব চিঠি যায়নি মহাপরিচালকের কার্যালয়েও। একই তথ্য জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র।
এর আগে, গত ১ এপ্রিল ও ২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যেসব চিঠি ইস্যু করা হয়, সেগুলোর স্মারক নম্বর ছিল পর্যায়ক্রমে ৪৪৯, ৪৫১, ৪৫৩ ও ৪৫৪। কিন্তু সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের হাতে আসা নতুন এই চিঠিতে স্মারক নম্বরে দেখা যায় ৫৬৬৯, জুন মাসের চিঠিতে স্মারক নম্বর ছিল ৫৮৩৬/১।
আরও পড়ুন: রিজেন্ট কাণ্ডে ‘বাঁচতে’ নকল চিঠি বানিয়েছেন অধিদফতরের পরিচালক
এপ্রিল ও জুনের এই দুই চিঠির স্মারক নম্বরে কেন এই অসামঞ্জস্যতা, চিঠি দুইটির কোনো রেকর্ড অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়ে নেই কেন— জানতে চাইলে ডা. আমিনুল সোমবার (২০ জুলাই) সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। প্রতিদিন এমন হাজার হাজার চিঠি ও ফাইল আমাকে দেখতে হয়। তাই আমার পক্ষে কোনো কিছু এক্সাক্টলি মেমোরাইজ করা ডিফিকাল্ট। এটা সম্ভব না। যেমন গতকালও আমি কয়টা ফাইল দেখছি, চিঠি দিয়েছি, কী করছি— এটাও কিন্তু আমি আজকে বলতে পারব না।’
এর আগে রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম-প্রতারণা নিয়ে গত ৫ জুলাই ডা. আমিনুল সারাবাংলাকে বলেছিলেন, ‘রিজেন্টের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার বিষয়টি তাদের জানানো হলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। একই দিন রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া বিল নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কাছে যতবার অভিযোগ এসেছে, ততবারই আমরা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে ফোন করে জানিয়েছি। তারপরও কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে দেখিনি।’
দুই ক্ষেত্রেই রিজেন্টকে বিষয়গুলো মৌখিকভাবে জানানোর কথা বললেও কোনো চিঠি দেওয়ার বিষয় উল্লেখই করেননি ডা. আমিনুল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।