Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিপৎসীমার উপরে বেশিরভাগ নদীর পানি, বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা


২৩ জুলাই ২০২০ ১৮:৩৫

আকাশ থেকে ঠাহর করা যায় না এ কোনো আর্কিটেক্টের মিনিয়েচার মডেল কি না! ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সারাদেশেই বর্ষার বৃষ্টি জনজীবনে প্রভাব ফেলেছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শ্রাবণের বৃষ্টিতে দেশের বেশিরভাগ নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নদ-নদীগুলোর পানি কোথাও কোথাও বাড়লেও অনেক জায়গায় সামান্য পরিমাণে কমছে। এদিকে বাংলাদেশের উজানে ভারতের বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। সেজন্য সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্যার পানি বেড়ে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে টাঙ্গাইল জেলার এলাসিংঘাট ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাটে। এই দুই পয়েন্টে ধলেশ্বরী ও পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা থেকে এক মিটারেরও বেশি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম অংশে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কিছু এলাকা জলাবদ্ধতার কারণে বন্যা কবলিত হওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবনযাপনে দুর্ভোগ ও দুর্দশা বেড়েই চলেছে।

ওপর থেকে দেখলে গ্রামের অবয়বটা বোঝা যায়। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট

এদিকে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি বেশিরভাগ পয়েন্টেই বেড়েছে। আর কমেছে দুয়েকটি পয়েন্টে। আগামী সাতদিন দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহতভাবে বাড়বে। মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানিও আগামী ২৪ ঘণ্টা বাড়তে পারে। এছাড়া ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এরই মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। উপচে ওঠা তিস্তার কারণে উত্তরাঞ্চলে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হচ্ছে।

বালু নদীর ডেমরা পয়েন্টে করতোয়া চকরহিমাপুর পয়েন্টে, আত্রাই নদী আত্রাই পয়েন্টে, তিতাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ও সোমেশ্বরী কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের ২০টিরও বেশি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশের বন্যাকবলিত জেলা ২৪টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বন্যার পানি দেশের খাদ্য ভাণ্ডার উত্তরাঞ্চলের ১৮ জেলার ৬৪ উপজেলার বেশ ক্ষতি করেছে।

এই জলে ডুবে-ভেসেও চিন্তা করতে হয় জীবিকার, ছুটতে হয় পানি ভেঙে। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, ধরলা নদী কুড়িগ্রাম অংশে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী অংশে ৫১, যমুনার ফুলছড়ি অংশে ৭৫, যমুনার বাহাদুরাবাদ অংশে ৮২, যমুনার সারিয়াকান্দি অংশে ৮৪, যমুনার কাজিপুর অংশে ৬৩, যমুনার সিরাজগঞ্জ অংশে ৬১, যমুনার আরিচা অংশে ৬০, গুড়ের সিংড়া অংশে ৭৪, আত্রাইয়ের বাঘাবাড়ি অংশে ৯৭, ধলেশ্বরীর এলাসিন অংশে ১১০, ঘাঘট গাইবান্ধা অংশে ৪৮, করতোয়ার চকরহিমপুর অংশে ৩, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া অংশে ৪০, লাক্ষ্যার নারায়ণগঞ্জ অংশে ১০, কালিগঙ্গার তারাঘাট অংশে ৯৬, ধলেশ্বরীর জাগির অংশে ৭১, আত্রাইয়ের আত্রাই অংশে ৪, পদ্মার গোয়ালন্দ অংশে ১০৪, পদ্মার ভাগ্যকুল অংশে ৭৫, পদ্মার মাওয়া অংশে ৬৫, পদ্মার সুরেশ্বর অংশে ৩৫, সুরমার কানাইঘাট অংশে ৭৪, সুরমার সিলেট অংশে ৪, সুরমার সুনামগঞ্জ অংশে ৩০, পুরাতন সুরমার দিরাই অংশে ২৮, যদুকাটার লরেরগড় অংশে ৬৮, তিতাসের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে ৭, সোমেশ্বরীর কলমাকান্দা অংশে ২৭ এবং মেঘনার চাঁদপুর অংশে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কিন্তু নিচে এলেই না বোঝা যায়, ঘরগুলো ডুবে আছে গলা পানিতে। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট

বাংলাদেশ চারটি বিভাগসহ ভারতের চেরাপুঞ্জি, জলপাইগুড়ি ও শিলংয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ২৫ জুলাই পর্যন্ত উজানে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর প্রভাবে দেশের নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়াবে। তবে এই পানি দেশে স্থায়ী হবার সম্ভাবনা কম। আগস্ট মাস থেকেই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

তবে জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের পর এবারের বন্যা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হবে। মঙ্গলবার (২১ জুলাই) জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স এমন আশঙ্কার কথা জানায়। সংস্থাটির নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আগস্ট মাসের আগে পানি কমতে শুরু করবে এমন সম্ভাবনা কম। বন্যায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৪ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়ে সরকারি আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৫৬ হাজার মানুষ। প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ বাড়িঘর ডুবে গেছে। বাঁধ এবং বাঁধের মতো সুরক্ষা অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল- এই তিন দেশে ৯৬ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ডাঙার দেখা নেই বলে এই মৌসুমে নৌকা ছাড়া গত্যান্তর নেই। ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট

এদিকে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে প্রাণহানি অনেক বেড়ে গেছে। গত ৩০ জুন থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে বন্যায় ৮৬ জনের মৃত্যু হওয়ার খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল রুম। এদের মধ্যে অনেকে পানিতে ডুবে, সাপের কামড়সহ পানিবাহিত রোগেও মৃত্যুবরণ করেছে।

তবে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেছেন, ‘বন্যা হলেও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ যাতে কমিয়ে আনা যায়, সে বিষয়েও নজরদারি আছে। বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায়ও সরকারের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। যার কারণে কোথাও বন্যা হলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।’

বুধবার (২২ জুলাই) সচিবালয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অবনতির আশঙ্কা টপ নিউজ নদ-নদীর পানি বন্যা পরিস্থিতি বিপৎসীমার উপর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর