Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস জড়িত: সিআইডি


২৪ জুলাই ২০২০ ০০:২২

ঢাকা: সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি প্রেসের যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত ১৫ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত এই চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই সিআইডি এ তথ্য পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে এক সংবাদে সম্মেলনে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের বিস্তারিত তুলে ধরেন সিআইডির সাইবার পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শাহ আলম। এসময় বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার কামরুল আহসান ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস উপস্থিত ছিলেন।

সিআইডি’র হাতে গ্রেফতার পাঁচ জন হলেন— মূল হোতা জসিম উদ্দিন ভুইয়া ওরফে মুন্না এবং এস এম সানোয়ার হোসেন, মো. পারভেজ খান, জাকির হাসান দিপু ও মোহাইমিনুল ইসলাম বাঁধন। চক্রের হোতা জসিম ও তার ১৪ সহযোগীসহ অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনের বিরুদ্ধে গত ২০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে সিআইডি।

এর আগে, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের এক মামলায় ৪৭ জনকে এবং ২০১৮ সালে আরেক মামলায় মূল হোতাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশের এ অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন একটি প্রেসে ১৯৮৮ সাল থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্ন ছাপা হতো। প্রেসের সঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের যোগাযোগ ছিল। তাদের পরিবারের সদস্য কেউ কেউ প্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এছাড়া প্রেসের কোনো সদস্য বা প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকের, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল চক্রটির। এর ভিত্তিতে তারা প্রশ্নগুলো প্রেস থেকে একটি বাসায় নিয়ে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের পড়াত। আমরা তদন্ত করছি, শিগগিরই এ বিষয়ে জানাতে পারব।’

লিখিত বক্তব্যে সুমন কুমার দাস বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর চক্রের অন্যতম দুই হোতা সানোয়ার হোসেন ও মোহাইমিনুল ইসলাম বাঁধনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। বাঁধনের কাছ থেকে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নেওয়া ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে সানোয়ার হোসেন জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের পশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের  সঙ্গেও জড়িত। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় চক্রের অন্য হোতা জসিম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নু এবং তার সহযোগী জাকির ও পারভেজকে।

সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জসিম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নু জানান, ২০১৩  থেকে তারা ধারাবাহিকভাবে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। এই চক্রে তার সঙ্গে ৫০ জনেরও বেশি সহযোগী যুক্ত। চক্রটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আয় করেছে। এ অর্থ দিয়ে বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছে চক্রটি।

সুমন কুমার দাস বলেন, চক্রের হোতা জসিম উদ্দিনের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ৩৯টি চেক, ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, ১৪টি মোবাইল ফোন, তিনটি গাড়ি ও দু’টি বাড়িসহ অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া পারভেজের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের ৮৪ লাখ টাকার চেক ও জাকিরের কাছে ৫৭ লাখ টাকার এফডিআর ও চেক পাওয়া গেছে।

অপরাধ তদন্ত বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এর আগে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রেস ও পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন বের করে সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া দু’টি চক্রকে চিহ্নিত করে সাইবার পুলিশ ও সিআইডি। ওই মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিটও দেয় সিআইডি। তাদের মধ্যে গ্রেফতার ছিলেন ৪৭ জন। তাদের ৪৬ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

অপরাধ তদন্ত বিভাগ আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ টপ নিউজ প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র প্রশ্নফাঁস ভর্তি পরীক্ষা সরকারি ডেন্টাল কলেজ সরকারি মেডিকেল কলেজ সিআইডি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর