‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছাড়ানোর নামে মোটা অঙ্কের টাকা মেরেছেন সাহেদ’
২৪ জুলাই ২০২০ ০২:১১
ঢাকা: পরীক্ষা না করেই করোনার সার্টিফিকেট প্রদান, টাকা নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হলেও ভুয়া ফলাফল দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে র্যাবের কাছে রিমান্ডে থাকা রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৬০টি অভিযোগ পেয়েছে র্যাব। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, চাকরির আশ্বাসে অর্থ আত্মসাৎ, বদলি তদবির, রিকশা-ভ্যানের ভুয়া লাইসেন্স প্রদান, পদ্মাসেতু প্রকল্পে পাথর-বালু ও বিটুমিন সাপ্লাইয়ের নামে প্রতারণা এবং সবশেষ জেল থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছাড়ানোর নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মেরে দিয়েছেন সাহেদ।
গত পাঁচদিনে (শনিবার থেকে বুধবার) পর্যন্ত হটলাইন নম্বরে এ সব অভিযোগ পায় পুলিশের এলিট সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) রাতে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সারাবাংলাকে এ সব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এ প্রতারকের অভিনব সব প্রতারণার তথ্য জানাতে র্যাব একটি হটলাইন নম্বর ও ই-মেইল চালু করে। গতকাল হটলাইন বন্ধ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬০টি অভিযোগ আমরা পেয়েছি, যারমধ্যে ফোনকলের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে ১৩৯টি। আর বাকি অভিযোগ ই-মেইলের মাধ্যমে এসেছে। অভিযোগ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সাহেদের সাড়ে ১২ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য আমরা পেয়েছি। এর বাইরেও তার বিরুদ্ধে ৪৮টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে।’
তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনে এ সব মামলার বিষয় আমলে নেবেন বলে জানান র্যাবের মুখপাত্র।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতারের পর দেবহাটা থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে মামলাটি করা হয়েছে, সেই মামলায় তার রিমান্ড চাওয়া হবে। এ জন্য সব আইনি প্রক্রিয়া প্রস্তুত করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘এছাড়া জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় র্যাবের করা মামলাটি আমাদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এদিকে সাহেদের বিরুদ্ধে করা প্রতারণার অভিযোগের মামলায় ১৭ জনের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। একই মামলায় সাহেদ ও রিজেন্ট এমডি মাসুদকে র্যাব হেফাজতে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গত ৬ জুলাই রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরের দিন হাসপাতালটির উত্তরা ও মিরপুরের দুটি শাখা সিলগালা এবং সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব। মামলার পর সাহেদ ঢাকা থেকে পালিয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে সবশেষ সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করে। ১৫ জুলাই ভোরে ভারতে পালানোর প্রস্তুতির সময় সাহেদকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে নিয়ে উত্তরায় তার অফিসে তল্লাশী চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় সাহেদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানা ও সাতক্ষীরায় পৃথক মামলা হয়।
এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে করা মামলাটি উত্তরা পশ্চিম থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে সাহেদ ও রিজেন্টের এমডি মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতারের পর ওই দিনই তাদেরকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের দুজনকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড চাইলে আদালত দশদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বর্তমানে সেই মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে সাহেদকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাহেদকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।