টার্মিনাল সুবিধা বাড়েনি একফোঁটা, ডিএসসিসি’র টোল বেড়ে দিগুণ
২৪ জুলাই ২০২০ ০৮:১৮
ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিপর্যস্ত পুরোদেশ। এর আগে লকডাউনে টানা ৬৬দিন কোনো যানবাহন চলেনি। এখন রাস্তায় গাড়ি চললেও আগের মতো যাত্রী নেই। এতে আয় কমেছে পরিবহন মালিকদের। তবে এই করোনাকালেও গুলিস্তান-জয়কালী মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার টার্মিনালে টোল আদায়ের হার দ্বিগুণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। টার্মিনালের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকলেও সংস্থাটির পরিবহন বিভাগ দেড়মাসের বেশি সময় ধরে আগের চেয়ে দিগুণ হারে টোল আদায় করছে।
ডিএসসিসি বলছে, প্রায় ১৮ বছর ধরে টার্মিনালের টোল বাড়ানো হয়নি। তাই এমন সিদ্ধান্ত। তবে তাদের এমন সিদ্ধান্তে ওই এলাকাসংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে সিটি করপোরেশনের এমন আচরণ পরিবহনে চাঁদাবাজিকে আরও উৎসাহিত করবে। তাছাড়া যার জন্য টোল আদায় করা হচ্ছে সেই টার্মিনালের পর্যাপ্ত সুবিধাই নেই পরিবহনের জন্য। তাই বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে পরিবহন মালিকরা ডিএসসিসির মেয়র বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
টোল বাড়ানো সংক্রান্ত সিটি করপোরেশনের আদেশে দেখা গেছে, গত ৩০ জুন থেকে গুলিস্তান জয়কালিমন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার টার্মিনালসংশ্লিষ্ট যানবাহন থেকে টোল আদায়ের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে সায়েদাবাদ সিটি টার্মিনালের জন্য বাস/মিনিবাস থেকে ৩০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, গুলিস্তানে ২০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা। এছাড়া এই দুই টার্মিনালে সিএনজি, অটোরিকশা, টেম্পু ও নাভানা মেক্সিতে ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা এবং পিকআপ ও লেগুনাতে ৩০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়।
পাশাপাশি টার্মিনালে মালামাল নামানোর ক্ষেত্রে কুলির মজুরি আদায়ের হারও বাড়ানো হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদা, মরিচ, আলু, ডিম, শশা ও পটলের জন্য প্রতিবস্তা বা ঝুঁড়ি (বড়) ২০ টার জায়গায় ৩০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ছোট বস্তা বা ঝুঁড়িতে ১০ টাকার স্থলে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রতি খাঁচি মাছ (বড়) ৩০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও প্রতিখাঁচি মাছ (ছোট) ৩০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিখাঁচি (বড়) পানের জন্য ৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও ছোট খাঁচির জন্য ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
প্রতি বান্ডেল চামড়া ৩০ টাকা স্থলে বান্ডেল ৫০ টাকা ও ছোট বান্ডেল ৪০ টাকা; মুরগি বড় খাঁচি প্রতিটি ৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও ছোট খাঁচি ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা; প্রতি কার্টুন ওষুধ ১০ টাকার স্থলে বড় কার্টুন ৩০ টাকা ও ছোট কার্টুন ২০ টাকা; প্রতি কার্টুন সিগারেট ১০ টাকার স্থলে বড় কার্টুন ২০ টাকা ও ছোট কার্টুন ১০ টাকা; প্রতি ঝুঁড়ি ফল ২৫ টাকার স্থলে বড় ঝুঁড়ি ৫০ টাকা ও ছোট ঝুঁড়ি ৪০ টাকা; প্রতি খাঁচি টমেটো ২৫ টাকার স্থলে ৪০ টাকা; ফার্নিচার ৬০ টাকার স্থলে ১০০টাকা; বৈদ্যুতিক ক্যাবল প্রতি বান্ডেল ১৫ টাকার স্থলে ৫০ টাকা; কাপড় প্রতি বড় বেল ৫০ টাকার স্থলে ৬০ টাকা ও ছোট বেল ২৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা; বড় টিভি প্রতিটি ২০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও ছোট টিভি ১৫ টাকার স্থলে ৪০ টাকা; স্যালোমেশিন ৭০ টাকার স্থলে ১০০টাকা; জুতার কার্টুন বড় ৩০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা ও ছোট ১৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা; হাড়ি-পাতিল বড় বস্তা প্রতিটি ৫০ টাকা ও ছোট বাস্তা ৪০ টাকা; টিউবওয়েল প্রতিটি ২০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা; বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কার্টুন প্রতটি ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা; মোটরসাইকেল প্রতিটি ৮০ টাকার স্থলে ১০০টাকা, বাইসাইকেল প্রতিটি ১০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা ও প্রতিটি বান্ডেল বইখাতা ১৫ টাকার স্থলে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমন হারে টোল ও কুলির মজুরি বাড়ানোর কারণে ক্ষুব্ধ পরিবহন মালিকরা। বিষয়টি নিয়ে অর্ধশতাধিক পরিবহন কোম্পানির মালিক ডিএসসিসির মেয়র বরাবরে গত ৬ জুলাই একটি লিখিত আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের পরিবহনের গাড়িগুলো গুলিস্তান-জয়কালি মন্দির, মতিঝিলসহ তার আশপাশের এলাকা থেকে চলাচল করে। এই গাড়িগুলো রাস্তার ওপর থেকে চলাচল করছে। এখানে কোনো ধরনের টার্মিনাল নেই। আমরা টার্মিনালের কোনো সুযোগ-সুবিধাও পাই না। তারপরও এতদিন ২০ টাকা হারে সিটি করপোরেশনর ধার্যকৃত টোল দিয়ে আসছি। কিন্তু এখন ইরাজারাদার গুলিস্তান-জয়কালি মন্দির, মতিঝিল, গোলাপবাগ মোড়, ধলপুরের উত্তর ঢাল এবং ন্যাশনাল আইডিয়ার স্কুলের সামনে থেকে ৬০ টাকা হরে টোল আদায় করছে।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস বিরাজ করছে। রাস্তায় যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা লোকসানে গাড়ি চালাচ্ছি। আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত টোল ৪০ টাকার স্থলে পূর্বের নির্ধারিত ২০ টাকা বহাল রাখার জন্য আবেদন করছি।
জানতে চাইলে উৎসব পরিবহনের ব্যবস্থাপক কাজল মৃধা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বহু বছর ধরে আমাদের কাছ থেকে টার্মিনালের নামে ২০ টাকা করে টোল আদায় করে আসছিল ডিএসসিসি। যদিও তখন কোনো টার্মিনাল ছিল না। আমরা ছিলাম ভাসমান। এখনও তাই। কিন্তু বর্তমানে টার্মিনালের নামে গুলিস্থান থেকে ৪০ টাকা ও সায়েদাবাদ থেকে ৬০ টাকা আদায় করছে ইজারাদাররা। আমরা এর প্রতিবাদও করতে পারি না। প্রতিবাদ করলে মার খেতে হয়। তাই আমরা মেয়রের কাছে টোল আগের মতো রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে দরখাস্ত দিয়েছি। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যে টার্মিনাল টোল রয়েছে এটি প্রায় ১৮ বছর ধরেই চলছে। কিন্তু এতদিনে কোনো ফি বাড়ানো হয়নি। তাই মেয়র বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন। কমিটির তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যেহেতু বর্তমান টোলের হার ১৮ বছর আগে নির্ধারণ করা সেহেতু এটা বাড়ানো উচিত। সে কারণে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই আমরা টোল বাড়িয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন মেয়র দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় দুমাস হলো। তিনি এরই মধ্যে ওই এলাকায় টার্মিনালের সুবিধা বাড়াতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।’
করোনাকালে টোল বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনায় প্রকৃত অর্থে সড়কে কিন্তু যাত্রী কমেনি। আবার করোনার কারণে যাত্রীদের থেকে ভাড়াও বাড়িয়েছে পরিবহন মালিকরা। তাহলে টোল বাড়ানো যাবে না কেন?’
গুলিস্তান-জয়কালী মন্দির স্টপওভার টার্মিনালে টার্মিনাল টোল দ্বিগুণ টোল বৃদ্ধি ডিএসসিসি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপেরেশন দ্বিগুণ টোল সায়েদাবাদ সিটি স্টপওভার টার্মিনালে সুবিধা না বাড়ানো