‘করোনা ঝুঁকিতেও এসডিজি বাস্তবায়নে এগিয়েছে বাংলাদেশ’
২৫ জুলাই ২০২০ ১৮:২৪
ঢাকা: করোনায় ঝুঁকিতে পড়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন। এজন্য কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে পাঁচটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো হলো- শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য ও উন্নয়ন, ক্লিন এনার্জি, টেকসই ভূমি এবং ডিজিটাল টেকনোলজির ব্যবহার। তবে এর মধ্যেও এসডিজি বাস্তবায়ন সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ।
শনিবার (২৫ জুলাই) সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন এর সদ্য প্রকাশিত ‘টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০২০’ নিয়ে এক ওয়েবিনার আলোচনায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। গণমানুষের কণ্ঠস্বর: বাংলাদেশে ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন জোড়দারকরণ প্ল্যাটফর্ম এই অনলাইন জুম মিটিংয়ের আয়োজন করে।
পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমানের পরিচালনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পকিল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহফুজুল ইসলাম শামিম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পিকেএসএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ। পিকেএসএফ’র সদস্যভুক্ত সারাদেশের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা এই আলোচনায় অংশ নেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে সঠিক পথেই রয়েছে। ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান ১০৯ তম। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশর পরই রয়েছে ভারত। দেশটির অবস্থান ১১৭ তম, পাকিস্তানের অবস্থান ১২৪তম এবং আফগানিস্তানের অবস্থান ১৩৯তম। তবে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভুটান (৯১তম), মালদ্বীপ (৯৪তম) এবং নেপাল (৯৬তম)। এসডিজির ১৭টি গোলের মধ্যে চারটি গোলের ক্ষেত্রে খুব ভালো করেছে বাংলাদেশ। ছয়টি গোলের ক্ষেত্রে কিছুটা ভালো করেছে। তিনটি গোলের ক্ষেত্রে স্থবির এবং বাকি চারটি গোল বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ দারিদ্র নিরসনে সঠিক পথেই রয়েছে। তবে অতিদারিদ্র্য নিরসনে ভালো করলেও সাধারণ দারিদ্র্য নিরসন হার কমেছে। এছাড়া কোভিড-১৯’র নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। এ অবস্থায় পারস্পারিক অংশীদারিত্ব এবং সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিতে জোড় দিতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। আমি সরকারে আছি। সরকারের নানা আলোচনা আমরা গায়েও লাগে। সরকারের বাইরে যে আলোচনা-সমালোচনা সবই শুনি। ভালোই লাগে। যদিও কোভিড আমাদের পেছনে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা তারপরও এসডিজি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাব। এসজিটি বাস্তবায়ন আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সরকারি, বেসরকারি, সুশীল সমাজ এবং দেশের সকল শ্রেণিকে সঙ্গে নিয়েই এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব। এসডিজির জন্য বাজেট বরাদ্দ নেই। এক্ষেত্রে জেলা পর্যায় বাজেট থাকা প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির ব্কব্যে জুয়েনা আজিজ বলেন, ‘সূচকে আমরা এগিয়েছি। অবস্থান ভাল হয়েছে। অসমতা হ্রাসের ক্ষেত্রে আমাদের ডাটা নেই। এই সূচক পরিমাপের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সময় লেগেছে। এসডিজির সব গোল নিয়েই কাজ হচ্ছে। ১৫৯টি লক্ষ্য সবগুলো মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এসডিজির লক্ষ্যগুলো সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও এটি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়গুলো যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম নিচ্ছে সবগুলোই এসডিজির লক্ষ্যের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোভিড মোকাবিলায় আমরা কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী করোনার শুরুতেই প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সব শ্রেণির শিল্পের জন্যই এই প্যাকেজ রয়েছে। তাছাড়া গরীব মানুষদের নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। দরিদ্র্য মানুষদের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের সহায়তা রাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে।’
ড.শামসুল আলম বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। এসডিজি শুরুর পর থেকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে সেই আলোকেই। এখন অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও সেটিই করা হচ্ছে। তাছাড়া বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই এসডিজি বাস্তবায়নই হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আমরা পরিস্থতি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাব।’
কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতে প্রয়োজনে বাজেট পুনর্বিন্যাস করতে হবে। গণমানুষের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে। ধারাবাহিকভাবেই আমরা আলোচনা করে থাকি। সরকারের কমিটমেন্ট আছে। সেখানে কোনো সন্দেহ নেই।