পয়ঃনিষ্কাশনে ৭৪০ জন পরামর্শক, বরাদ্দ ৯০ কোটি টাকা!
২৫ জুলাই ২০২০ ২৩:৪২
ঢাকা: পয়ঃনিষ্কাশনে পরামর্শকের পকেটেই যাবে ৯০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। মোট ৭৪০ জন পরামর্শকের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ‘খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৯২৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দেবে ১ হাজার ৪০৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে খুলনা ওয়াসা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সুপারভিশন কন্সালটেন্সি সার্ভিসের জন্য ৫৬৯ জন (বিদেশি ৯৫ জন এবং দেশি ৪৭৪ জন) পরামর্শক নিয়োগের জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭২ কোটি টাকা। এছাড়া ইনস্টিটিউশনাল অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ডিজাইন কন্সালটেন্সি সার্ভিসে ১৭১ জন পরামর্শকের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে প্রস্তাবিত পরামর্শক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
গত ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় কোন ধরণের পরামর্শক এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন পর্যায়ে নিয়োজিত করা হবে? এছাড়া একক পরামর্শকের বেতন/ভাতা বাবদ প্রতিমাসে কি পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে, সেসব তথ্য টেবিল আকারে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযোজন করতে হবে। সেইসঙ্গে পরামর্শকের বেতন-ভাতা অঙ্গের ‘প্রভিশনাল সাম’ উপ-অঙ্গের ব্যয় অত্যাধিক হওয়ায় তা পর্যালোচনা করে কমাতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনের এ দুটি সুপারিশ প্রতিপালন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। পরামর্শকের বেতন/ভাতাসহ সব তথ্যই টেবিল আকারে যুক্ত করা হয়েছে ডিপিপিতে। পাশাপাশি প্রভিশনাল সাম অঙ্গের ব্যয় হ্রাস করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- পরামর্শক সেবা গ্রহণ, দুটি ৬০ এমএলডি ও ৩০ এমএলডি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১৭৩ কিলোমিটার স্যুয়ার নেটওয়ার্ক নির্মাণ, আটটি স্যুয়ার পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ, ৭৭ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন স্থাপন, ৩০ হাজারটি হাউজ কানেকশন একটি ওয়েট ল্যান্ড নির্মাণ, ৫২ কিলোমিটার বিদ্যমান ইউটিলিটির পুনর্বিন্যাস, স্যুয়ার ক্লিনিং ইক্যুইপমেন্ট ক্রয়, ল্যাবরেটরি ইক্যুইপমেন্ট ক্রয় এবং এক লাখ ১৫ হাজার ৭৪১ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম এবং দ্বিতীয় বন্দরনগরী। রুপসা ও ভৈরব নদীর তীরবর্তী অংশে শহরের প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রসাতি হয়েছে। খূলনা শহর ভৈরব নদীর দীর্ঘ প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। শহরের উত্তর-পশ্চিম অংশে নিচু ও বিল অঞ্চল অবস্থিত। খুলনার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোতে জোয়ারভাটা হয়। খুলনা শহরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাস। কিন্তু এখন পর্যন্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় শহরের প্রায় অধিকাংশ লোকই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজস্ব ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে পয়ঃনিষ্কাশনে নগরবাসীর মধ্যে কিছু সংখ্যক কূপ পদ্ধতি এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সেপটিক ট্যাংক পদ্ধতি ব্যবহার করছে। আর সেপটিক ট্যাংক ও কূপগুলোর অধিকাংশই রাস্তার পাশে অবস্থিত এবং উন্মুক্ত পরিবেশে ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এসব ট্যাংক ও কূপের পানি এবং ময়লা উন্মুক্ত ড্রেনে গিয়ে পড়ছে। বৃষ্টিপাতের সময় গৃহস্থালির বর্জ্য এবং ট্যাংক ও কূপের বর্জ্য একসঙ্গে মিশে রোগজীবাণুর প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে খুলনা সিটি করপোরেশন ছোট কন্টেইনার গাড়ির মাধ্যমে অনিয়মিতভাবে সেপটিক ট্যাংক থেকে পয়ঃবর্জ্য পরিবহন করে সেনিটারি ল্যান্ড ফিল্ডে অপসারণ করছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা নগরীরর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে এডিবির অর্থায়নে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ ‘ওয়েস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট মাস্টার প্ল্যান ফর খুলনা সিটি করপোরেশন’ শীর্ষক একটি প্রাক সম্ভাব্যতা জরিপ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে এটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সেই আলোকে স্যুয়ারেজ পাম্প স্টেশন ও সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল ‘খুলনা শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এই অধিগ্রহণ করা জমিতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ‘খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খুলনা শহরে উন্নতমানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। ফলে মহানগরীতে নাগরিক সেবা বাড়বে। সেইসঙ্গে প্রকল্পের আওতায় ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কার্যক্রমের মাধ্যমে খুলনা ওয়াসার লোকবলের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় দক্ষতা বাড়ানো হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
৭৪০ জন পরামর্শক ৯০ কোটি অনুমোদন একনেক খুলনা টাকা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা পরামর্শক ব্যয় স্থানীয় সরকার বিভাগ